মুক্তিযুদ্ধের গান ও কবিতার দেয়ালিকা
|
|
|
এই পাতাটি পাশাপাশি, ডাইনে-বামে ও কবিতাগুলি উপর-নীচ স্ক্রল করে! This page scrolls sideways < Left - Right >. Poems scroll ^ Up - Down v.
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ঊনসত্তরের ছড়া – ১
ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে
দুয়োর বেঁধে রাখ।
কেন বাঁধবো দোর জানালা
তুলবো কেন খিল ?
আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে
ফিরবে সে মিছিল।
ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক !
ট্রাকের মুখে আগুন দিতে
মতিয়ুরকে ডাক।
কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে !
তোরাই তবে সোনামাণিক
আগুন জ্বেলে দে।
ঊনসত্তরের ছড়া – ১ ও ২ কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। "ঊনসত্তরের গণতুফানের ঢেউ, আকুলতা আর
আগুন আল মাহমুদে বাঙ্ময়। তাঁর ছড়া আঙ্গিকের দু'টি কবিতা গোটা ঊনসত্তরের সংগ্রামকে করে প্রতিনিধিত্ব। ‘শুয়োরমুখো ট্রাকে’
র প্রতীকে তিনি উপস্থাপন করেন আইয়ুবী দুঃশাসনকে এবং শহীদ আসাদুজ্জামান ও শহীদ মতিউর রহমানের আত্মদানে যে উজ্জীবন, যে
প্রাণপাতালের সাড়া, তাতে নবরূপে জেগে ওঠার আহ্বান জানান কবি। ডাক দেন জনতাকে। আগুন জ্বেলে দেওয়ার দায়িত্ব তুলে দেন
তারুণ্যের হাতে।" ---২০১৯ সালের ১৬ জুলাই, 'প্রতিদিনের সংবাদ' পত্রিকায় 'আল মাহমুদ ও মুক্তিযুদ্ধ' শীর্ষক নিবন্ধ থেকে উদ্ধৃত। এই
ওয়েবসাইটে যেতে এখানে ক্লিক করুন . . . ।
গ্রন্থসূত্র : 'আল মাহমুদের কবিতা' -- প্রকাশক: আবদুল
আজীজ আল আমান, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা-৭,
প্রকাশকাল: ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫১ বঙ্গাব্দ, পৃষ্ঠা - ৩০৬ ও ৩০৭)।
এই ছড়া দুটি প্রসঙ্গে আরো কিছু কথা -- বাঙালির
ধারাবাহিক সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ৬৯-এর গণ-
অভ্যুত্থান। আন্দোলনে বারুদের মতো কাজ করলো আল
মাহমুদের “উনসত্তরের ছড়া”, এই প্রসঙ্গে কবি স্বয়ং তাঁর
আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “ছড়াটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে নানান আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। গলায়
হারমোনিয়াম জড়িয়ে ছাত্র-শিল্পীরা গেয়ে উঠেছিলো,
“কোথায় পাবো মতিয়ুরকে
ঘুমিয়ে আছে সে
তোরাই তবে সোনামাণিক
আগুন জ্বেলে দে।” (আত্মজৈবনিক রচনাসমগ্র, পৃষ্ঠা নং
৩০৯)। সৌজন্য: 'মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং কবি আল
মাহমুদ' --- 'দৈনিক পূর্বদেশ', ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১,
ঊনসত্তরের ছড়া - ২
কারফিউ রে কারফিউ
আগল খোলে কে ?
সোনার বরণ ছেলেরা দেখ
নিশান তুলেছে।
লাল মোরগের পাখার ঝাপট
লাগলো খোঁয়াড়ে
উটকোমুখো সান্ত্রী বেটা
হাঁটছে দুয়ারে।
খড়খড়িটা ফাঁক করে কে
বিড়াল-ডাকে 'মিউ',
খোকন সোনার ভেঙচি খেয়ে
পালালো কারফিউ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
নিজেকে বাঁচাতে হলে পরে নাও হরিৎ পোশাক
সবুজ শাড়িটি পরো ম্যাচ করে, প্রজাপতিরা যেমন
জন্ম-জন্মান্তর ধরে হয়ে থাকে পাতার মতোন।
প্রাণের ওপরে আজ লতাগুল্ম পত্রগুচ্ছ ধরে
তোমাকে বাঁচাতে হবে হতভম্ব সন্ততি তোমার।
নিসর্গের ঢাল ধরো বক্ষস্থলে
যেন হত্যাকারীরা এখন
ভাবে বৃক্ষরাজি বুঝি
বাতাসে দোলায় ফুল
অবিরাম পুষ্পের বাহার।
জেনো, শত্রুরাও পরে আছে সুজ কামিজ
শিরস্ত্রাণে লতাপাতা, কামানের ওপরে পল্লব
ঢেকে রেখে
নখ
দাঁত
লিঙ্গ
হিংসা
বন্দুকের নল
হয়ে গেছে নিরাসক্ত বিষকাটালির ছোটো ঝোঁপ।
ক্যামোফ্লাজ কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত
"সোনালী কেবিন" কাব্যগ্রন্থের কবিতা। কবিতার কথা সৌজন্যে ইবেঙ্গলাইব্রেরি.কম।
বাঁচাও বাঁচাও বলে
এশিয়ার মানচিত্রে কাতর
তোমার চিৎকার শুন দোলে বৃক্ষ
নিসর্গ, নিয়ম।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তার আহবান ছিলো নিশিডাকের শিসতোলা তীব্র বাঁশীর মত।
প্রতিটি মানুষের রক্তবাহী শিরায় কাঁপন তা বাজত
নদীগুলো হিসহিস শব্দে অতিকায় সাপের মত ফণা তুলে দাঁড়াতো
অরণ্যের পাখিরা ডাকাডাকি করে পথ ভুলে উড়ে যেত সমুদ্রের দিকে।
সে যখন বলল, ‘ভাইসব।’
অমনি অরণ্যের এলোমেলো গাছেরাও সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে গেল
সে যখন ডাকলো,‘ভাইয়েরা আমার।’
ভেঙ্গে যাওয়া পাখির ঝাঁক ভীড় করে নেমে এল পৃথিবীর ডাঙায়
কবিরা কলম ও বন্দুকের পার্থক্য ভুলে হাঁটতে লাগলো
খোলা ময়দানে।
এই আমি
নগন্য এক মানুষ
দেখি, আমার হাতের তালু ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছে
এক আগুণের জিহবা।
নিশিডাক কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আল মাহমুদ এই কবিতাটি লিখেছিলেন। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে,
তাঁর কোনো কাব্যগ্রন্থে, কবিতা সমগ্রে কিংবা রচনা সমগ্রতেও কবিতাটি নেই! সম্প্রতি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও নুরুল হক কবিতাটি সংগ্রহ করেছেন
হইসেল ব্লগে। কবিতার কথা সৌজন্যে https://huisel-mag.blogspot.com/। আবৃত্তি আবদুল বাতেরের কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে Shot flim শর্ট ফিল্ম
বাংলাদেশ YouTube Channel ।
বলো, তোমার জন্যই কি আমরা হাতে নিইনি আগুন?
নদীগুলোকে ফণা ধরতে শেখায় নি কি তোমার জন্য–
শুধু তোমার জন্য গাছে গাছে ফুলের বদলে ফুটিয়েছিলাম ফুলকি,
আম গাছে গুচ্ছ গুচ্ছ ফলেছিল
গ্রেনেড ফল। আর সবুজের ভেতর থেকে ফুৎকার দিয়ে
বেরিয়ে এল গন্ধকের ধোঁয়া। আহ্
আমি এখন আর চোখ মেলতে পারছি না।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি আন্দামানের সেলুলার জেলের, যা যে কোনো রাষ্ট্র দ্বারা তার জনগণের উপরে চরম নিপীড়ন ও নির্যাতনের প্রতীক। আবার এই দেয়াল ও গরাদগুলিই স্বাধীনতাকামী মানুষের জীবনপণ করা প্রতিবাদেরও প্রতীক!
|
|
|
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ
দুপুর বেলার অক্ত
বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায়?
বরকতের রক্ত।
হাজার যুগের সূর্যতাপে
জ্বলবে এমন লাল যে,
সেই লোহিতেই লাল হয়েছে
কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে!
প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে
ছড়াও ফুলের বন্যা
বিষাদগীতি গাইছে পথে
তিতুমীরের কন্যা।
চিনতে না কি সোনার ছেলে
ক্ষুদিরামকে চিনতে?
রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে
মুক্ত বাতাস কিনতে?
একুশের কবিতা কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। সুর ও শিল্পী - কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের শহীদদের
স্মৃতির উদ্দেশে রচিত কবির এই কবিতাটি ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বহুল প্রচারিত হয়। গানের কথা এবং গানের ভিডিও সৌজন্যে Dhrubo ধ্রুব
YouTube Channel বাচিক শিল্পী ফয়সাল আজিজের কণ্ঠে আবৃত্তি, ভিডিওটি সৌজন্যে VoiceArt YouTube Channel । গ্রন্থসূত্র: 'আল মাহমুদের
কবিতা' -- প্রকাশক : আবদুল আজীজ আল আমান, হরফ প্রকাশনী, কলকাতা-৭, প্রকাশকাল: ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৮৭ বঙ্গাব্দ (১৯৮০), পৃষ্ঠা নং ৩০৩।
পাহাড়তলীর মরণ চূড়ায়
ঝাঁপ দিল যে অগ্নি,
ফেব্রুয়ারির শোকের বসন
পরলো তারই ভগ্নী।
প্রভাতফেরী, প্রভাতফেরী
আমায় নেবে সঙ্গে,
বাংলা আমার বচন, আমি
জন্মেছি এই বঙ্গে।
বাচিক শিল্পী ফয়সাল আজিজের কণ্ঠে আবৃত্তি
|
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমাকে বিদীর্ণ করে মাটি ও রক্ত ফুঁড়ে বেরিয়েছে এই নিশান।
তারপর আর ‘আমি’ বলে কিছু নেই।
আমি আমি আমি।
না, আমরা অর্থাৎ এই সবগুলো নদী, এই সবগুলো মানুষ, এই সবগুলো পাখি
পতঙ্গ পরিবেশ।
এই তো আমরা। আমাদের অস্তিত্বের ভেতর থেকে লক্ষ লক্ষ মসজিদের মিনার।
কলরবমুখর হয়ে উঠেছে এই নীলিমা, চন্দ্র সূর্য তারকারাজি
আমাদের আযানই তো আমাদের স্বাধীনতা।
আমাদের সিজদা-ই তো প্রকৃতপক্ষে মনুষ্যত্বের জয়গান।
বলো কতদিন ধরে আমরা হাঁটছি, কত কাল কত যুগ?
শিকলের ঝনৎকার বয়ে নিয়ে আমারা সবগুলো নদী পার হয়ে এসেছি
সবগুলো স্রোতস্বিনী। কিন্তু পারাপারে তো আমাদের দাসত্ব ঘোচেনি
আমাদের অন্তরাত্মা না না করেছে
কিন্তু দাসত্বের ঝনৎকারকে আমরা কখনোই চমৎকার বলতে পারি না।
তারপর আমরা নিজেরাই নিজেদের রক্তে তৈরি নদী অতিক্রম করে
দেখি ভোর হয়েছে। সেটা ছিল ঊষার উদয়কাল
এক অলৌকিক আযান ভেসে এলো আমাদের সত্তার ভেতর দিয়ে
আর খসে পড়ল সমস্ত শিকলের ঝংকার বন্ধন এবং বেদনা
তাহলে কি আকাশের দিকে মুখ তোলা ঐ মোয়াজ্জিনের আহ্বানের মধ্যেই
মানুষের মুক্তি উচ্চারিত হচ্ছে না?
এসো সিজদায় লুটিয়ে পড়ি।
দিগ্বিজয়ের ধ্বনি কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। ২০০৫ সালে প্রকাশিত কবির 'না কোন শূন্যতা মানি না' কাব্যগ্রন্থের কবিতা। কবিতার কথা
সৌজন্যে https://saifali1590.me/।
তারপর শুরু হোক আমাদের অফুরন্ত গতি
আমাদের কি কোনো শেষ আছে?
আমরা আমাদের দৃষ্টি দিগন্তে দিকে মেলে ধরেছি
দাড়ি নেই, কমা নেই, নেই কোনো সেমিকোলন
আমরা সমস্ত দৃশ্যপট অতিক্রম করে আমাদের গন্তব্যে গিয়ে পৌঁছবো।
কে আমাদের মধ্যে ভয়ের গুঞ্জন তুলতে চায়?
আমাদের কারো পোশাকে তো কোনো কাপুরুষতা ও ভীরুতার চিহ্ন ছিল না।
যারা ঘর্মাক্ত তারা বিশ্রাম নিক
সবগুলো শব্দ অতিক্রম করে এই মিছিল দিক চক্রবাল ফুঁড়ে বেরিয়ে যাক
আযানের দিকে
আহ্বানের দিকে
বিজয়ের দিকে
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
যারা আমাকে পরামর্শ দিতো মানুষ একা থাকতে
পারে না। তারা হয়তো সত্যিই বলতো। কিন্তু আমি
ছিলাম অনমনীয়। ছিলাম একটা পোড়ামাটির
পাত্রের মতো। কারো ক্রোধ হলে পাত্রটিকে
পাথরে আছড়িয়ে চূর্ণ করতে পারবে। কিন্তু
দুমড়ে মুচড়ে আবার কাদার মতো ইচ্ছে
পুরণের মাটিতে পরিবর্তন করতে পারবে না।
প্রকৃত পক্ষে আমি অর্ধেক মানুষ আর বাকি
অর্ধেক তো কবিতা। সম্পূর্ণ মানুষ বলেতো
কখনও গণ্য হইনি, কেউ মানে নি।
বলো, এজন্যই কি আমি এতো একা?
ইতিহাসের তীর্যক গতির মধ্যে যারা এই
বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছে চেয়ে দেখি
তাদের বয়স খুবই কম। তারা জানেও না
পতাকার ওই সূর্য কাদের রক্তে ভিজে
আছে। তারা লাল রঙটা দেখে আর
খলখলিয়ে হাসে। কিন্তু আমি তো জানি
সেখানে জমাট বেঁধে আছে মানুষের
রক্ত। যারা যোদ্ধা ছিলো।
যাদের নাম শহীদের তালিকায় নেই।
অথচ আমি তাদের নাম জানি।
আমি ইচ্ছে পূরনের মাটি নই কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)। ২০০৫ সালে প্রকাশিত কবির
'না কোন শূন্যতা মানি না' কাব্যগ্রন্থের কবিতা। রচনাকাল ১২ ডিসেম্বর ২০০৪। কবিতার কথা সৌজন্যে https://saifali1590.me/।
কেউ জিজ্ঞাসা করুক? আমি তাদের নাম
একের পর এক বলে দিতে পারি। তোমরা
তাদের নামের পরে কোনো যতি চিহ্ন
ব্যবহার কোরো না। না কমা, না দাড়ি।
তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা নিয়ে মাথা
ঘামায়নি। কারণ তাদের চেতনার চেয়ে তাদের রক্তই
ওই পতাকায় জমাট বেঁধে আছে বেশী। অসহ্য
লালে রঞ্জিত। আমি কি উচ্চারণ করবো
তাদের নাম?
আমি জানি কেউ তাদের নাম শ্রবণেন্দ্রিয়ে
ধারণ করতে পারবে না। তাদের সব পর্দা ফেটে
যাবে। তারা পালাবে লেজ গুটিয়ে। যেমন চির
পরাজিতেরা গর্তে লুকোয়। তেমনি।
সাবধান আমার প্রতিটি কাব্যে বাক্যে উপমায়
অলংকারে আমি লুকিয়ে রেখেছি তাদের নাম।
এক একটা শতাব্দী এসে সে সব নাম উচ্চারণ
করতেই থাকবে।
পালাও হারামজাদারা। কোথায় পালাবে?
এক একটি শতাব্দীতে এক একটি নামের
পৃষ্ঠা বাতাসে উল্টে যাবে। পালাও
হারামজাদারা। কোথায় পালাবে?
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে ফুল ফুটেছে রক্তবরণ
ফেব্রুয়ারির শহীদ ভাইয়ের মুখগুলোকে করছি স্মরণ
বাংলা ভাষা রক্তে ভাসা মায়ের আশা হোক বিজয়ী
জীবন দিল রফিক সালাম বরকতেরা শহীদ ত্রয়ী
রাস্তা ছাড়ো রাস্তা ছাড়ো মিছিল যাবে কবর গাহে
কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে যাই মিশে যাই ঐ প্রবাহে
শোকের বসন নগ্ন পদে আসছে ধেয়ে মানুষ যত
সবার বুকেই জ্বলছে যেন শাহাদাতের বুলেট ক্ষত
বাংলাভাষা মায়ের ভাষা এই ভাষাতেই জিয়ন মরণ
কৃষ্ণচুড়ার পাতার ফাঁকে ফুল ফুটেছে রক্তবরণ
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ হাঁটতে হবে আর কত দূর
ভোরের বাতাস মিলিয়ে গিয়ে ডাক দিয়েছে তপ্ত দুপুর
বাঁকের পরে বাঁক ঘুরেছি পেরিয়ে এলাম শহিদ মিনার
মিছিল তবুও থামছে না তো পার হবে কি নদীর কিনার
কোন সে নদী কি নাম নদীর রক্ত তিতাস বলছে সবে
মোড় ঘুরেছে মিছিল আমার স্বাধীনতায় থামতে হবে
লহুর নদী পার হয়ে ফের মিছিল এগোয় নতুন ধরণ
স্বাধীনতার শহিদ প্রাণের নামগুলোকে করছি স্মরণ
মাগ ফিরাতের মাঙছি দোয়া হাত তুলে ওই মেঘের দেশে
তাঁর করুণা পরুক ঝরে দীপ্ত স্বাধীন বাংলা দেশে
কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁকে ফুল ফুটেছে রক্তবরণ কবি আল মাহমুদ (১১.৭.১৯৩৬ - ১৫.২.২০১৯)।
আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী শরীফ মাহমুদ এর কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে Sharif Mahmud Official YouTube Channel । কবিতার
কথা শুনে লেখা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
॥ গান॥
অবাক পৃথিবী দেখো
রূপসী বাংলা রুদ্র মূর্তি আজ॥
তোমরা চিনতে মায়াভরা সেই বাংলাকে
তামরা জানতে শস্য শ্যামলা বাংলাকে
সেই সে বাংলা আজ হয়েছে ক্ষুধার রাজ॥
যে দেশ ছিল সোনার ফসলে ভরা
যে দেশ ছিল লীল নভঃনীলে বেড়া
আঘাতে আঘাতে সেই পলিমাটি চৌচির হলো আজ॥
যে মাযাকুঞ্জ একদিন ছিল পাখির কুজনে ভরা
যে সহজ মন একদিন ছিল স্নেহ প্রীতি মায়া ঘেরা
সে হৃদয় যন্ত্রে আজ গরজে উঠেছে বাজ॥
অবাক পৃথিবী দেখো কথা - কবি নূরে আলম সিদ্দিকী।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত
গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
॥ গান॥
রক্তেই যদি ফোটে
জীবনের ফুল
ফুটুক না, ফুটুক না, ফুটুক না॥
আঘাতেই যদি বাজে
প্রভাতের সুর
বাজুক না, বাজুক না, বাজুক না॥
গান গান গান বেজেছে অগ্নি গান
দূর সব ব্যবধান
সাত কোটি প্রাণ বিসর্জনে
বাংলা গ্লানি ঘুচুক না, ঘুচুক না॥
এক এক এক
হয়েছি সবাই এক
আসুক দুর্বিপাক
ক্ষুব্ধ মিছিল চলবেই চলবে
প্রলয়-ঝঞ্ঝা উঠুক না, উঠুক না॥
রক্তেই যদি ফোটে কথা - কবি সৈয়দ শামসুল হুদা।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত
গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
॥ গান॥
সাত কোটি আজ প্রহরী প্রদীপ
বাংলার ঘরে জ্বলছে,
বন্ধুগো এসো হয়েছে সময়,
পখ যে তোমায় ডাকছে।
বন্ধুগো আজ চেয়ো না পিছে,
আজকে শঙ্কা করো না মিছে,
বাংলার মাটি, বাংলার তৃণ,
তোমাদেরই কথা বলছে॥
বন্ধু অনেক বেদনা সয়েছি,
অনেক হয়েছি কাতর,
বন্ধু ভুলেছি বেদনা এবার
হৃদয় করেছি পাথর॥
রক্তের দাম চাইনাকো আর
আজকে দেখুক বিশ্ব আবার,
বাংলার প্রাণে, বাংলার গানে
আগুনের শিখা জ্বলছে॥
সাত কোটি আজ প্রহরী প্রদীপ কথা - কবি সারওয়ার জাহান।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক”
গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
॥ গান॥
অত্যাচারীর পাষাণ কারা জ্বালিয়ে দাও।
সভ্যতার ওই বধ্যভূমি জ্বালিয়ে দাও।
শক্রহনন চলছে দিকে দিকে
সকল যুগের নিপীড়িতের পক্ষ থেকে
'আপোসহীন সংগ্রামের
শেষ কথাটি জানিয়ে দাও।
অসুরের হাড়কাঠে
তোর পায়ের ধূলিঝড়
ওরে লাগুক,
লাগুক ভয়ঙ্কর---
খুনের বদলা খুন নেবো
খুন নেধো আজ,
রক্ত লোভীর খুনী পাঁজর ভেঙে
হানাদারের কল্জে ছিঁড়ে
খুনের আগুন জ্বালিয়ে দাও॥
অত্যাচারীর পাষাণ কারা জ্বালিয়ে দাও কথা - কবি আল মুজাহিদী।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ওরে আমার দেশের মানিক সোনা॥
তোরা হাসিয়া জীবন দিতেছিস
শেখ মুজিবের সব জানা॥
তোদের মতো কে আর আছে,
তোদেরে মারতে বসেছেরে॥
তোরা দুরচারী ধ্বংস কর
সহায় আছে রব্বানা॥
কত দিন করবে শয়তানী
উড়িয়ে দেরে তার জীবন খান॥
তোরা শেষ কর তাদের দুশমনি
গুলিকে ভয় কইর না॥
যত শয়তান আছেরে দেশে,
বেশিদিন রবে না,
কয়দিন পরে খুঁজলে তাদের,
একটিও পাবি না॥
তোদের কাছে সবাই নত,
শেষ করে দাও শত শত॥
এখন হইছে বাঘে হত হত
প্রাণ ভয়ে আর বাঁচে না॥
ওরে আমার দেশের মানিক সোনা কথা সুর ও শিল্পী - কবি শাহ আলী সরকার। বিপ্রদাশ
বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মোদের ফসল কেড়ে নিলরে,
যারা মারলো জাতি-কুলরে,
তোরা ভাই শেষ কর তাদেরে॥
তাদের পাঠাইয়া দেরে তোরা,
ঐ না যমের ঘরে॥
তোদের খাইয়া মানুষ হইল,
তাই বাঘেরা বেঁচে রইলরে॥
এবার বুঝিয়ে দে ভাই সকল
কেমনে যায় সে পারে॥
হানাদারীর পাঞ্জেগানা
ভিতরে শয়তানী
এবার বুঝুক বাঙ্গালিদের
সিংহ বিক্রমণি॥
তোরা জয়ধ্বনি কর ... বাঙ্গালি
জোরছে কষে গুলি মাররে॥
দেখবি তোরা জয় হয়েছিস
এই ভব সংসারে॥
মোদের ফসল কেড়ে নিলরে কথা সুর ও শিল্পী - কবি শাহ আলী সরকার।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের
দলিলপত্র থেকে সংকলিত
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ওরে ও বাঙ্গালিরে,
দুশমনদেরে, দেশে রাইখ না॥
যারা তোদের খাইয়া তোদের মারে
তারে ক্ষমা কইর না।
খানের ঘরে খান ইয়াহিয়া---
মানব পশু গেছেরে হইয়া॥
ভাইরে মারে ভাই হইয়া
কি আজব এ ঘটানা॥
কতদিন আর ঘুমাও ঘরে ;
চাইয়া দেখ আজ বাহিরে,
ওরে অবোধ নয়ন মেললি না॥
ও বাঙ্গালি---
মরুভূমির বাঘে ঘুরে
এবার মার ধইরে ধইরে॥
চালাও শুলি বুদ্ধির জোরে
একটিও প্রাণ রাইখ না॥
ওরে ও বাঙ্গালিরে কথা সুর ও শিল্পী - কবি শাহ আলী সরকার। বিপ্রদাশ বড়ুয়া
সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা
বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত গান (পৃষ্ঠা ৫১২-৫২৭)। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে
সংকলিত
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১
নারী :
কহ বীর ত্বরা করি কীবা সমাচার?
কিভাবে দলিছে মিত্রসেনা রণাঙ্গনে
এহিয়া চমুরে? ভূপাতিত ইয়াহিয়া
গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে?
পুরুষ :
গহন কাননে যথা বিঁধি মৃগররে
কিরাত অব্যর্থ-শরে, ধায় দ্রুতগতি
তার পানে ; শত শত মিত্রসেনা বলী
তেমনি ধায় যশোর শক্রদুর্গ পানে
চূর্ণিয়া বিচূর্ণ হত করিতে তাহারে।
যথা প্রভঞ্জন বলে উড়ে তুলারাশি
চৌদিকে, পাক-চমুর পলাইল রণে
হেরি যমাকৃতি মুক্তিসেনা রথীদলে।
হুঙ্কারে, বিষম ঘাতে ব্যথিত কুমতি
পলাইলা, পলাইলা সত্রাসে চৌদিকে।
মহারোষে যমসম মুক্তি মিত্র সেনা
ঘেরিলা, ঘেরিলা অবরুদ্ধ খান সৈন্য
বেড়াজাল মাঝে যথা ক্ষীণপ্রাণ মীন।
এহিয়া বধ কাব্য রচনা - কবি গাজিউল হক। আবৃত্তি - উম্মে কুলসুম (পুরোনাম উম্মে কুলসুম মুশতারি শফি) এবং আশফাকুর রহমান। সংকলক ও সম্পাদক - উম্মে কুলসুম।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত (পৃষ্ঠা ৪৩১)। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনুষ্ঠান
“অগ্নিশিখা”-তে, ৩ ডিসেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখের মধ্যে, ধারাবাহিকভাবে প্রচারিত কবিতা। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
সমর্পিল অস্ত্র যত দীন করজোড়ে
মাগিল জীবন ভিক্ষা নরাধম কূল।
'যশোহর দুর্দশিরে বিজয় কেতন
বাঙ্গালার মুক্তিসেনা উড়ায় গৌরবে।
নারী :
যশোহর দুর্গ তবে হয়েছে পতন?
কহ বীর ত্বরা আর আর রণাঙ্গনে
কিভাবে যুঝিছে মিত্র অক্ষৌহিনী সেনা?
পুরুষ :
সিলেট কুমিল্লা টাংগাইল নোয়াখালী
জিনি হেলাভরে, আন্দোলিযা নীলাকাশে
ঘোর রবে গরজিয়া ভীষণ সরবে
চলিয়াছে মিত্রসেনা ঢাকা অভিমুখে
প্রলয়ের মেঘ কিম্বা করীযুথ যথা।
অগ্নিময় আকাশ পুড়িছে কোলাহলে
যথা যবে ভূকম্পনে, ঘোর বজ্রনাদে
উপরে আগ্নেয়গিরি অগ্নিস্রোতোরাশি
নিশীথে! আতঙ্কে শত্রু উঠিছে কাঁপিয়া
কাঁপিছে মালিক বিভীষণ প্রাণভয়ে
থরথরি পিন্ডিনাথ কাঁপে সিংহাসনে।
অলংঘ্য সাগর সম মিত্র অক্ষৌহিণী
বেড়িছে তাহারে। রক্ষা নাহি এবে তার।
বনের মাঝারে যথা শাখাদলে আগে
একে একে কাঠুরিয়া কাটি, সবশেষে
নাশে বৃক্ষে ; মহারথী মিত্র অক্ষৌহিণী
তেমতি দুর্বল করে এহিয়া পামরে
নিরন্তর অবিলম্বে সমূলে নির্মূল
হইবে কুমতি। রক্ষিবে না কভু তারে
চীন আনেরিকা ; রক্ষিবে না খান সেনা
আপনার জন। তুরঙ্গে কুরঙ্গে যেবা
মৃগেন্দ্র কেশরী নখে ছিন্নভিন্ন করি
নাশে প্রাণ, শৃগালেরে পদতলে চাপি
পিষ্ঠ করি সংহারে ক্রোধান্ধ ঐরাবত
তেমতি নাশিবে প্রভঞ্জন-সেনা সম
মিত্রসেনা ঘোর রনে এহিয়া পামরে।
নারী :
ধর্ম-নাম লয়ে যেবা ধর্ম নাশিয়াছে,
ধর্ম তারে করিবে না ক্ষমা। ধর্ম কভু
ক্ষমিবে না ঘোর অধর্মীরে। নরহন্তা
পাশব শ্বাপদ লভিবে না প্রাণভিক্ষা।
পুরুষ :
পৃথিবীর রাষ্ট্রপুঞ্জ যদি ছত্র ধরি
তারে রক্ষিবারে চাহে, বজ্রাঘাত হতে
রক্ষা নাহি তার। লুকালে জলধিতলে
মিত্রসেনা জল সেচি অতল সলিল
আনিবে ধরিয়া তারে মৃত্যুদণ্ড লাগি।
অধর্মের পরাজয় জানো সুনিশ্চয়।
নারী :
জয় সত্যের জয়, জয় ধর্মের জয়
উভয় কণ্ঠ :
জয় মুক্তিবাহিনীর জয়, জয় জয়
জয় জীবনের জয়, জয় বাংলার জয়।
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
...ডিসেম্বর, ১৯৭১
পুরুষ :
দুরাত্মা দানব দল মদমত্ত হয়ে
হানিয়াছে বঙ্গবক্ষে নিষ্ঠুর আঘাত
কাপুরুষ সম। সদা রুধিরাক্ত দেহে
কাঁদিছে জননী। হিংস্র হায়েনারা সবে
প্রমত্ত উল্লাসে ফেরে রাতের আঁধারে
প্রসারিয়া লোলজিহ্বা প্রেতের মতো।
দুগ্ধপোষ্য শিশুদের স্তূপ মৃতদেহ,
ধর্ষিতা নারীর দেহে রাখি পদ ভার
বিধাতার জয়গান গাহিছে দানব।
পাকিস্তানের গলিত শব কাঁধে বহি
ইসলাম বাঁচাইতে করিছে বাসনা
পামর এহিয়া
নারী :
ইসলাম কি বাঁচিবে তাহে?
মানবতা হত্যাকারী জল্লাদের
হাতে ধর্ম কভু লভিবে কি প্রাণসুধা?
পুরুষ :
ধর্ম কহেনা কভু নিষ্পাপ শিশুদেহে
করিতে আঘাত। ধর্ম কভু কহে নাই
নারীদেহ পশুসম করিতে দলন।
ধর্ম কভু কহে নাই সুতীক্ষ্ণ শাণিত
অস্ত্রে নারীদেহ খওবিখণ্ডিত করি
রক্ত মাখা মুখে গাহিতে ধর্মের গান।
যদি কেহ অস্ত্রাঘাতে শিশুহত্যা করে
যদি কেহ মদমত্ত পাশব ক্ষুধায়
নারীদেহ করিবে দলন তার লাগি
রহিয়াছে অনির্বাণ অনন্ত নরকে।
নারী :
ইয়াহিয়া পাকসেনা মুখে ভাই বলি
ভাতৃবক্ষে হানিয়াছে পাশব আঘাত
নারীরক্তে করিয়াছে ক্ষমাহীন পাপ
বংলার বুকে।
পুরুষ :
তারি লাগি দৃঢ়পদে
চলিয়াছে মুক্তিসেনা ক্ষমাহীন ক্রোধে
বিধাতার বজ্রসম করিতে সংহার
পাক পশু সেনা। ক্ষিপ্ত কেশরী যেমতি
বনভূমি প্রকম্পিয়া প্রচও গর্জনে পশুদেহ
ছিন্ন ভিন্ন করি তপ্তরক্তে করে
তৃষ্ণা নিবারণ, মদমত্ত করি
যথা শঠ শৃগালেরে পদতলে দলি
প্রতিহিংসার আগুন যত করে প্রশমন
তেমতি দুরন্ত ক্রোধে বীর মুক্তিসেনা
সুতীক্ষ্ণ অস্ত্র প্রহারে জর্জরিত করি
পাক সেনা যত, প্রতিশোধ বহ্নি করে
নির্বাপণ। শত্ররক্তে করি স্নান সদা
নিভাইছ প্রতিহিংসার প্রজ্বলিত চিতা।
ক্রুদ্ধ সিংহসম মুক্তিসেনা আগমনে
দানবের দল ভীত স্বাপদের মতো
পুচ্ছ নামাইযা প্রাণভয়ে ছুটিয়াছে
আত্মরক্ষা লাগি। দিকে দিক ধ্বনিতেছে
গগন বিদারী কণ্ঠে বাংলার জয়,
নারী :
জয় সত্যের জয়, জয় ধর্মের জয়---
উভয় কণ্ঠ :
জয় মুক্তিবাহিনীর জয়, জয় জয়
জয় জীবনের জয়, জয় মানবতার জয়।
১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১
নারী :
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ মাঝে
কিবা খেলা চলিয়াছে কহ সমাচার।
পুরুষ :
নিরাপত্তা পরিষদে চীন আমেরিকা
স্বীয় স্বার্থে অন্ধ হয়ে কুকীর্তি স্থাপিল
ধরা মাঝে। স্বর্ণ বঙ্গে দুরাত্মা এহিয়া
কনক কমল বনে ঐরাবত যথা
লণ্ড ভণ্ড করে সব বিস্মারিল তাহা।
বিস্মারিল দানবের প্রচণ্ড ক্ষুধায়
জ্বলিতেছে এবে বাংলার জনপদ।
স্বীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ লাগি তোষণ করিছে
দুরাত্মা দানবে। ভারত আগ্রাসী কহি
মুক্তিযুদ্ধ দংশিবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে
উঠিয়াছে মাতি, আনিয়াছে পরিষদে
প্রগলভ প্রস্তাব ক্ষান্ত হও, ক্ষান্ত হও
মহান ভারত! অস্ত্র করো সংবরণ।
নারী :
অতঃপর কি করিল মহান রাশিয়া?
পুরুষ :
গর্জিয়া উঠিল রাশিয়ার প্রতিনিধি
ধূর্ত শৃগলেরে দেখি সঘনে গর্জিয়া
যেমতি কেশরী ধায় বিদ্যুৎ গতিতে
ধরিতে তাহারে পাপিষ্ঠ ভ্রমিছে দেখি
যেমতি গর্জিয়া ওঠে সুর সুরপতি,
হানে বজ্র পাপিষ্ঠের শির লক্ষ করি
রাশিয়ার প্রতিনিধি তেমন গর্জিয়া
হানিল বজ্রের প্রচণ্ড আঘাত। ভেটো দিয়া
কহিল অশনি স্বরে, পাপী পাকিস্তান
কোটি লোক করিয়াছে নিজ গৃহ হারা,
দশ লক্ষ মানুষের রক্ত মাখি হাতে
মহাপাপ করিয়াছে পামর এহিয়া
শৃগাল হইয়া সিংহে করিছে আঘাত
ভারত সীমান্ত দেশ করি আক্রমণ।
কোথা ছিল তুমি বীর চীন আমেরিকা
জল্লাদ বাহিনী যবে হিংস্র হয়ে
ছিন্ন ভিন্ন করেছিল বাংলার দেহ?
কোথা ছিলে তুমি বীর চীন আমেরিকা
জল্লাদ বাহিনী যবে ক্রুর লালসায়
আহুতি দিছিল ভোগে লক্ষ লক্ষ নারী?
মানবতা বিসর্জিয়া আসিয়াছ এবে
পশু লাগি করিতে ক্রন্দন, দানবেরে
রক্ষা করিবারে? কিন্তু হীন ইচ্ছা তব
হবে না সাধিত। যতদিন পাক সেনা
না ছাড়িবে বাংলার মাটি যতদিন
গলবস্ত্রে পামর এহিয়া চাহিবে না।
ক্ষমা ভারতের পায়ে, অস্ত্র ততদিন
কোষবদ্ধ করিবে না ভারত কেশরী।
নারী :
ভেটো লভি দিশাহারা হইয়াছে তারা
কলংক জর্জর মুখে কথা নাহি আর।
হীনতার পরিচয় সর্ব অঙ্গে মাখি
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যাচে
দস্যুর জীবন ভিক্ষা। লজ্জা নাহি পায়
নিক্সন সরকার। নির্লজ্জ হয়েছে
চীন প্রগলভ কুমতি। এতদিন ধরি
গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলি ভিয়েতনামে
লক্ষ লক্ষ লোকে হত্যা করি আমেরিকা
বাংলার গণতন্ত্র হত্যা অনুষ্ঠান
করিবার ষড়যন্ত্রে রত। বিসর্জিয়া
মানবতা, সাম্যবাদ বুলি প্রকাশিছে
চীন আপনার ক্রুর গূঢ় অভিলাষ
ভারত বিদ্বেষ। মানবতা নিয়াছে সে
বলি আপনার হীন স্বার্থ বেদীমূলে
রক্ষা কি পাইবে তাহে পামর এহিয়া?
পুরুষ :
পৃথিবীর শক্তি যদি ছত্র ধরি থাকে
এহিয়ার শিরের উপর রক্ষা নাহি
রক্ষা নাহি তার। লুকাইয়া থাকে যদি
সমুদ্রে পর্বতে কিম্বা মরুভূমি মাঝে
রক্ষা নাহি পাবে, রক্ষা নাহি পাবে
কভু এহিয়া চামার। যশোহর জিনিয়াছে,
জিনিয়াছে মিত্রসেনা সিলেট সমর
চলিয়াছে বীর সেনা বীর পদ ভারে
করিতে হেলায় জয় ঢাকার অঙ্গন,
ব্যুহ ভাঙ্গি পলায়িত এহিয়া চামার
ত্রস্তভীত শ্বাপদ যথা মহা শংকায়
সন্দশিয়া বীরেন্দ্র কেশরী প্রাণভয়ে
ঊর্ধ্বশ্বাসে করে পলায়ন। সূর্যকর
মুক্ত এবে রাহুগ্রাস হতে, ধ্বনিতেছে
গগন বিদারী কণ্ঠ, বাংলার জয়---
নারী :
জয় ন্যায়ের জয়, জয় ধর্মের জয়
উভয় কণ্ঠ :
জয় মিত্রবহিনীর জয়, জয় জয়
জয় বাঙালির জয়, জয় সত্যের জয়।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বীরের এ রক্তস্রোত
মাতার এ অশ্রুধারা
এর যতো মূল্য সেকি ধরার ধূলায় হবে হারা?
স্বর্গ কি হবে না কেনা
বিশ্বের ভাণ্ডারী শুধিবে না
এত খণ?
রাত্রির তপস্যা সেকি আনিবে না দিন
নিদারুণ দুঃখ রাতে
মৃত্যুঘাতে
মানুষ চূর্নিল যবে নিজ মর্ত্যসীমা
তখনও দেবে না দেখা
দেবতার অমর মহিমা?
বীরের এ রক্তস্রোত কবি মহাদেব সাহা। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১২.১১.১৯৭১
তারিখে প্রচারিত কবির রচিত “বিশ্ববিবেক ও বাংলাদেশ” কথিকার কবিতা (পৃষ্ঠা ২০৭)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বাঁচতে চাইলে বাঁচবে এমন কথা তো নেই
প্রমাণ পেলে তো হাতে হাতে
বিশ লাখ শিশু নারী ও যুবক আজকে নেই
মরে গেছে তারা এক রাতে
বাঁচতে গেলেই বাঁচবে এমন কথা তো নেই॥
প্রভু, তুমি এই পুণ্যির মাসে ধন্যি,
ঝড়ে নেভায়েছো লক্ষ প্রাণের বহ্নি
সাগরে ডুবেছে আমার স্বপ্ন-শিশুরা
তোমার ধ্যানেতে নিরত এখনো যিশুরা
আর যারা আছে, তারা প্রাণ দেবে নীরবে---
নাহলে তোমার পুণ্যিমাসের কি রবে?
কাফনে জড়ানো চাঁদের শরীর গলিত লাশ
দ্বীপাঞ্চলের বাতাস এখন দীর্ঘশ্বাস
গোলাপের মতো কত ফোটা ফুল লুণ্ঠিত
মৃত্যু মলিন ঠোঁটে চাপা ক্ষোভ কুণ্ঠিত।
বাঁচতে চাইলে বাঁচবে এমন কথা তো নেই কবি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২০.১১.১৯৭১ তারিখে প্রচারিত মেসবাহ আহমেদ দ্বারা প্রযোজিত,
কবির রচিত “রমজানের ওই রোজার শেষে” কথিকার কবিতা (পৃষ্ঠা ৩৮২)।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আজ নয় নয়, নয় কোন আভরণ
রক্তে রক্তে বাজে দুন্দুভি শপথ নেয়ার দিন
আজকে প্রাণের মহফিলে বাজে
রুদ্র রৌদ্র বীণ॥
সারে সাত কোটি মানুষের বুকে
হানে যারা খঞ্জর
নয় ক্ষমা নয় হানো হানো তারে
দুর্জয় দুর্বার
উদ্যত মুঠি করো না শিথিল
মুক্তি সেনানী বীর॥
আজকে তিমির পল্ললে শোন
জীবনের মহাগান
জয় সংগ্রামী সাড়ে সাত কোটি
জয় জয় মহীয়ান।
আজ নয় নয়, নয় কোন আভরণ কবি মুস্তাফিজুর রহমান। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত
“স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের
রমজান মাসে প্রচারিত, কবি মুস্তাফিজুর রহমান রচিত “রক্তেরাঙা ঈদুল ফিতর” সঙ্গীতালেখ্যর প্রথম কবিতা (পৃষ্ঠা ৩৮৯)
।
মাহে রমজান-ত্যাগ ও তিতিক্ষার এক অপূর্ব প্রতীক। সংযত চরিত্রের মানুষের জন্য এ মাস এক বিরাট নেয়ামত। কিন্তু
আজ বাংলার মাটিতে যে দাবানল জ্বলে উঠেছে তাও এবারের রমজান এবং ঈদুল ফিতর পেয়েছে নতুন অর্থ। এবং
তারই আলোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে বাংলার মানুষ। ক্ষতবিক্ষত বাংলা। ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত। নতুন শপথে
ভাস্বর এবারের ঈদুল ফিতর। আনন্দ নয়, সংগ্রামী প্রত্যয়ে দৃঢ় তাই বাংলার মানুষ।
রক্ত রঙিন বাংলার বুকে
অতন্দ্র প্রহরায়
জাগে নির্ভীক লাখো সৈনিক
নাই ভয়, ভয় নাই
বঞ্চিত আজি জাগ্রত ওই
এসেছে মুক্তিদিন॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
এগিয়ে চলো
দিগন্ত থেকে দিগন্তে আজ
এগিয়ে চলো ॥ এগিয়ে চলো॥ এগিয়ে চলো॥
হিংস্র শ্বাপদ ওই হানাদার
নিঃশেষে নাম মুছে ফেলো তার
বাঙালির তরে বাংলার মাটি
নিঃশঙ্ক আজ বলো॥
মায়ের বোনের ভাইয়ের রক্তে
ভিজে গেছে এই মাটি
প্রাণের চেয়েও প্রিয়তম তাই
এ মাটি অনেক খাঁটি॥
এ মাটির বুকে কোন অনাচার
সইবো না কেউ সইবো না আর
হাতে হাতিয়ার নির্ভয় প্রাণ
জ্বেলে দাও সব আলো॥
এগিয়ে চলো কবি মুস্তাফিজুর রহমান। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের রমজান মাসে প্রচারিত, কবি মুস্তাফিজুর
রহমান রচিত “রক্তেরাঙা ঈদুল ফিতর” সঙ্গীতালেখ্যর দ্বিতীয় কবিতা (পৃষ্ঠা ৩৮৯)।
দুর্জয় সাহস, দৃঢ় মনোবল নিয়ে প্রতিরোধ করছে শত্রুর হামলা। প্রতিদিন এই বাংলার মানুষ নতুন এক সম্ভাবনায় হয়ে
উঠছে উজ্জীবিত। অপূর্ব এই মহাজাপরণ। বাংলার মাটি, বাংলার মানুষ আজ ধন্য। পূর্ণতর এক জীবনের সন্ধানে আজ
দেখছে নতুন স্বপন। নতুন সূর্যদিন ডাকছে ওদের হাতছানি দিয়ে। এক দিগন্ত থেকে অন্য আরেক দিগন্তে আজ
তাই চলেছে প্রাণের উল্লাসে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বাংলার নামে আজ শপথ নিলাম
মুজিবের নামে আজ শপথ নিলাম
বাংলাকে করবোই মুক্ত
শত্রুর বিষদাঁত ভাঙবোই ভাঙবোই
আজ আর নয় কোন শর্ত॥
কৃষক শ্রদিক চায় মুক্তি মুক্তি
ছাত্র মজুর চায় মুক্তি মুক্তি
সাড়ে সাত কোটি এই জনতার ইচ্ছা
মুক্তির জন্যে হয় হোক মৃত্যু॥
বাংলার বুকে যারা জ্বেলে দিল দাবানল
তারে আজ ক্ষমা নয়, ক্ষমা নয়
লেলিহান অগ্নির দুঃসহ প্রান্তে
দুশমন পুড়ে আজ হোক ছাই॥
বাংলার নামে আজ শপথ নিলাম কবি মুস্তাফিজুর রহমান। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত
“স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ সালের
রমজান মাসে প্রচারিত, কবি মুস্তাফিজুর রহমান রচিত “রক্তেরাঙা ঈদুল ফিতর” সঙ্গীতালেখ্যর তৃতীয় কবিতা (পৃষ্ঠা ৩৯০)
।
আজ নয় হিসেব-নিকেশের দিন, আজ নয় আনন্দ-উৎসবের দিন---আজ শুধু সংগ্রাম, ঘরে-বাইরে দুঃসহ দারুণ সংগ্রাম।
কাপুরুষ হানাদারদের নিঃশেষে খতম করে তবেই আমরা হবো নিশ্চিত। আজ এই দিনে আমরা তাই শপথ নিই
--- দেহের সর্বশেষ রক্তবিন্দু দিয়ে আমরা অর্জন করবো আমাদের স্বাধীনতা, যে স্বাধীনতা আমাদের জীবনের চেয়ে মহান।
শহর নগর চায় মুক্তি মুক্তি
বাংলার গ্রাম চায় মুক্তি মুক্তি
ত্রাসের কাঁপন লাগে শত্রুর বক্ষে
বাংলার বুকে ওরা একেবারে রিক্ত॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
শব্দকে আমার বড় ভয় ছিল
পৃথিবীর নানা রকম শব্দকে
বিশেষ বয়সে এসে অতর্কিত
বাবার পায়ের শব্দ, সেকেলে
খড়ম পড়া মায়ের চলার শব্দ,
প্রিয়তমার কাঁকণ নিক্কণ ; ট্রেনের
চাকার শব্দ, মোটরের বিস্ফোরণ,
প্রাচীন ইটের স্তূপে টায়ারের
আর্তনাদ---অকারণ ট্রাফিক হুইসিল,
এবং বিদগ্ধ দিনে রাজপথে
রোদ্রের বিলাপ---ইত্যাদি আনেক শব্দে
শব্দময় পৃথিবীকে আমার ভীষণ ভয় ছিল।
অথচ অবাক হই, ইদানীং,
আমি এক অত্যাশ্চর্য শব্দের মিছিল।
আমার আত্মায় শব্দ, শব্দ নাচে
প্রতি লোমকূপে, ধমনীতে, ফেনায়িত
রক্তের কণায়, জাগরণে, বিলম্বিত
ঘুমের সত্তায়।
শব্দ বাজে---সোনামুখি ধানের
শীষের মতো, চতুর্দশী কৃষাণী
মেয়ের চুলে রক্ত লাল
শাপলার খোপার মতো ;
শব্দের তারতম্যে কবি শিকদার ইবনে নুর। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৮ জুন ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা
৪০৬)। “শব্দ সৈনিক” ফেব্রুয়ারী ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
আমার সমস্ত দেহে, হৎপিণ্ডের
রক্তের ধারায়---শব্দ বাজে।
বাংলার শ্যামল মাঠে, আঙিনায়
পৈশাচিক পদশব্দ, নিসর্গের
বুক চিরে কামান গোলার শব্দ
বিধ্বস্ত মায়ের চোখে দুগ্ধপোষ্য
শিশুদের কচিকণ্ঠে শব্দের আগুন,
আমার পৃথিবী জুড়ে শব্দ শব্দ শব্দ শুধু ;
কাজেই, এখন আর শব্দকে, ভয় নেই,
আমিও নিজেই এক অত্যাশ্চর্য
শব্দের মিছিল।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বিকেল বিষণ্ণ তানে। ছাব্বিশে মার্চের বিকেল
বন্দর ধোঁয়াটে তখন চারদিকে ব্যারিকেড। অসংখ্য
সারি সারি ট্রাক। আগ্রাবাদ রাজপথে স্তূপীকৃত
পাখর আর ইট কাঠ---রাবিশের স্তূপ। বন্দরে
আটক তখন স্টিমার বাবর---জল্লাদে-ভরতি।
তখনো অবরুদ্ধ সব দুস্যুর দল---তিন দিকে
মুক্তিযোদ্ধা---মাঝখানে হাটহাজারী ক্যান্টনমেন্ট।
প্রবর্তক সংঘ আর সি. আর. বি. মুক্তিযোদ্ধার
দির্জয় ঘাঁটি। রাত্রির অন্ধকার নেমে আসে ক্রমে।
শব্দের হুংকারে আতঙ্কিত সমস্ত হৃদয়। সব
মনে আন্দোলিত ভীতির সঞ্চার---সমস্ত দেশে
বন্ধ সব যোগাযোগ। দাউ দাউ আগুন জ্বলে
সব বস্তীতে। জনপদে স্তূপীকৃত নারী, শিশু, বৃদ্ধ
আর ছাত্রের লাশ।
উন্মেষ কবি আবুল কাশেম সন্দীপ। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জুন ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪০৭)। শামসুল হুদা
চৌধুরী সংকলিত ও সম্পাদিত “একাত্তরের রণাঙ্গন” ১ম সংস্করণ ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
তখন রক্তাপ্লুত বাংলাদেশে
সূর্য প্রস্তুত রাত্রির গভীরে নতুন উদয়ের।
জ্যোতিষ্ক নির্মিত হলো নতুন আলোর। নবতর
উন্মেষ ইচ্ছা আর আকাঙ্ক্ষার সাত কোটি স্বাধীন
সূর্য-মন। বাংলাদেশে জীবনের এলো জাগরণ।
সমস্ত জীবন। স্বাধীনতা বাঙালির জীবনের পণ।
দুঃসহ আমাদের কাছে অসংখ্য মৃত্যুর খবর।
দুঃসহ আমাদের কাছের মৃত্যুর খবর।
আমাদের দুঃখ ও বেদনার বিক্ষোভ প্রকাশ---
শান্তির পথ নয় মুক্তির পথ : জনতার মুখে
বলিষ্ঠ শপথ বিজয়ের উল্লাসে মৃত্যুকে ভুলবো।
যুদ্ধই বাঙালির মুক্তির সনদ। হাতে হাতে অস্ত্রের
কঠিন প্রতিজ্ঞাগুলো মুক্তির উল্লাসে বিস্ময়কর।
দিগন্তে সূর্য লালে আকাঙ্ক্ষিত আলোকের ঝড়।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আবার দেখবো বাংলার পথে-ঘাটে
কৃষাণের লাঙ্গল জোয়াল---
সোনালী ধানের ক্ষেতে শালিকের আনাগোনা---
পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে ঝড় তোলা পানসী-নৌকা দেখবো।
দেখবো মাঠ থেকে ফেরা ষোড়শীর সোনালী মুখ
ভিজে দেহ, হিজল-বট-আমের বনে
দোয়েল শালিকের মেলা। দেখবো ডানপিটে ছেলের
দুরন্তপনা। বাড়াভাত নিয়ে বসে থাকা মায়ের
উদ্বিগ্ন মুখ আবার দেখবো।
আবার দেখবো রমনার কৃষ্ণচূড়ায়
থোকা থোকা লাল ফুল।
পল্টনের বাতাসে অনেক শপথী কণ্ঠ।
দেয়ালে দেয়ালে চোখ মেলে চেয়ে থাকা
সবুজ ইচ্ছে দেখবো। দেখবো---
ভার্সিটির চত্বরে অনেক উন্মুখ স্বপ্নের
চঞ্চলতা। শহীদ মিনারে নতুন শপথের
বজ্রমুষ্টি আবার দেখবো---
আবার দেখবো অজ্ঞাত কবি। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে জুন ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪০৮)। স্বাধীন বাংলা
বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
রেসকোর্সে মুজিবরের দৃপ্ত কণ্ঠ। ক্লান্ত দুপুরে
বৈরাগীর সুরেলা কণ্ঠ---সন্ধ্যায় ঘরফেরা।
মানুষের তালহীন কণ্ঠস্বর অবিশ্রান্ত শুনে যাবো---
আবার। আবার দেখবো---আমার চিরপরিচিতা
রূপসী বাংলাকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
রক্তে আখরে লেখা
. পঁচিশের মর্মন্তুদ রাত্রির
. ভয়াল পরিধি---নীল-স্বপ্নের
. সাতকোটি রজনী-জলের
. সমুদ্র কান্না শব্দ তরঙ্গ শিহরিত।
বাংলাদেশ---
. কুচক্রী শক্তিসমূহের লালসার
. পাদপীঠ কখনো নয় ;
এ নির্ভুল শাশ্বত সত্য যোজনার জবাব
. প্রস্তুত রণাঙ্গনে---
. সাড়ে সাতকোটি সুদৃঢ় বজ্রমুষ্ঠি।
ক্ষমার অযোগ্য পশুশক্তির
. নির্মম শাস্তি দিচ্ছি :
নিঃস্নেহে জীবনের শত্রুকে আহ্বান করে
. মৃত্যুর খোলা দরজা।
অশুভ শক্তির চ্যালেঞ্জ আমি কবি নেওয়াজিস হোসেন। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও
সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯শে সেপ্টেম্বর
১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪০৯)। “শব্দ সৈনিক” ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
২০১৭ সালে প্রকাশিত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিষদের সভাপতি ডঃ জাহিদ হোসেন প্রধান দ্বারা সম্পাদিত, “স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান” সংকলনের অন্তর্ভুক্ত। গানের কথা শুনে লেখা। উল্লেখনীয় এই যে গ্রন্থের ৫১২-পৃষ্ঠার
পাদটীকায় রয়েছে যে ১৯৭১ সালে নেওয়াজিস হোসেনের বয়স ১৫ বছরের বেশি ছিল না!
শব্গ দেয় উৎফুল্ল উপহার আমায়
. বিপুল বিপ্লবী সাড়া।
স্বজন হারানোর বেদন বিক্ষোভের সবটুকু বহ্নি
. আজ প্রাণ মনে উত্থিত।
নির্মেঘ আকাশে অযথা মেঘবির্ভাবকারীর
. কখনো যদি পুনরাবির্ভাব হয়,
তাহলে চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত ;
. অগ্নিমূর্তি এক আমি সত্তা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি-গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
কমান্ডার
আমরা প্রস্তুত
কামান, মর্টার, গানে, রকেটে, গোলায়
যুদ্ধের কড়া সাজে,
বেল্টে-বুটে
আমরা সেজেছি যথারীতি।
এবার তোমার অর্ডার দেবার পালা---
দাও অর্ডার
কমান্ডার।
দেখ, চারিদিকে প্রস্তুতির আয়োজন শেষ
কী ভয়াল সুন্দর অন্ধকার ঘনিয়েছে চারদিকে
এতক্ষণ যে মুমুর্ষু আলো ছড়াল
. কৃষ্ণপক্ষের অসুস্থ চাঁদ,
সেটাও টুপ করে খসে গ্যাছে কোন রহস্যালোকে
এখন শুধু অন্ধকার---
কি বিশ্বাসী বন্ধুর মতো ঘিরে আছে চারিদিক
আর দেখ কী লোমহর্ষক নীরবতা!
কুলায় ফিরে গ্যাছে সর্বশেষ পাখি
শুধু একটানা ঝিল্লীর ঝংকার।
এটাইতো শত্রু নিশ্চিহ্নের মাহেন্দ্রক্ষণ
কমান্ডার কবি নাসিম চৌধুরী। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা
৪১০)। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
কমান্ডার
আর দেরী নয়, শুধু অর্ডার
কমান্ডার
শুধু তোমার একটি অর্ডার
দেখবে কী দুর্জয় করে তোলে আমাদের।
কী প্রচণ্ড সাড়া জেগে ওঠে রক্তের ধারায়
কী প্রখর জ্বলে ওঠে চোখের তারা
কী অট্টশব্দে গর্জন করে ওঠে প্রতিটি অস্ত্র
আর তার সাথে কী সুন্দর মেলাবে
শত্রুর আর্তরব।
কমান্ডার, এবার শুধু অর্ডার করো, অর্ডার
তোমার অর্ডারের সঙ্গে সঙ্গে
ছুটে যাব আমরা
ঐ দূরে যেখানে শত্রুরা ফেলেছে ক্যাম্প
যেখানে প্রতিটি বাঙ্কারে শুয়ে আছে
. হিংস্র ঘাতকের দল
আর পেন্টাগনের জেনারেলদের মত
কুটিল বক্র ট্রেঞ্চগুলি লুকিয়ে রেখেছে যে
হিংস্র হায়েনাদের
সেখানে ছুটে যাব কী তুমুল প্রাণের আবেগে
গর্জে উঠবে আমাদের মুষ্টিচ্যুত গ্রেনেড
সেই ধংস উৎসবের আশায় বসে আছি
কমান্ডার
শুধু আদেশ দাও এবার।
কমান্ডার
আমরা প্রস্তুত।
কামান মর্টার গানে, রকেটে গোলায়
যুদ্ধের কড়া সাজে, বেল্টে-বুটে
আমরা সেজেছি যথারীতি
এবার তোমার অর্ডার দেবার পালা
দাও অর্ডার
কমান্ডার।
কমান্ডার
এখনো কী সময় হয়নি তোমার?
এখনো কী দৃষ্টি রাখবে ঘড়ির কাঁটায়?
উৎকর্ণ হবে ঘাসের প্রতিটি শিহরে?
দায়িত্ব কী পালন করবে তুমি
সংসারী কৃষাণীর মত
ভেবে-দেখে, কম্পনে-ত্রাসে?
দায়িত্ব গ্রহণ কী তবে বৃদ্ধত্ব গ্রহণেরই নামান্তর শুধু!
নইলে হিসাবের প্রয়োজন কী
ঘড়ি আর আঁধারের গাঢ়তা নিয়ে?
জানি তা আনবে আরো সুচারু সফলতা
কিন্তু আমাদের কাম্য তা নয়।
আমরা চাই বিশৃঙ্খল বেঠিকের মাঝে
ভয়াল বিজয়।
আমাদের যাত্রা হবে হঠাৎ আচম্বিতে
মনের তাড়ায়।
নিমেষে উগরাবো যতগুলি জ্বালা আছে মনে
চকিতে ছুঁড়ে দেবো যতগুলি গোলা পাবো চোখে
হিসাবের জের আর টানবো না ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে
আনবো না বিজ্ঞান অংকের মাপ
শুধু যাবার আবেগে চলে যাব।
কমান্ডার
যদি ঐ বিদেশী পদবীটার সাথে জড়তা ওতপ্রোত থাকে
তবে তা ছুঁড়ে ফেলো বিষাক্ত ঘৃণায়
ভুলে যাও সময়ের নির্দিষ্টতা
চলো একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়ি।
শত্রুগুলোর ওপর
তাদের নিশ্চিহ্ন করে দি
আমাদের বেহিসাবী উচ্ছৃঙ্খলতায়।
তারপর ক্ষতি হয়ে পড়ে থাকি
বে-নিয়ম পৃথিবীর পরে।
@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
শেকলে বাঁধা শ্যামল রূপসী, তুমি-আমি, দুর্বিনীত দাসদাসী-
একই শেকলে বাঁধা প’ড়ে আছি শতাব্দীর পর শতাব্দী।
আমাদের ঘিরে শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দ, স্তরে স্তরে শেকলের ঝংকার।
তুমি আর আমি সে-গোত্রের যারা চিরদিন উৎপীড়নের মধ্যে গান গায়-
হাহাকার রূপান্তরিত হয় সঙ্গীতে-শোভায়।
লকলকে চাবুকের আক্রোশ আর অজগরের মতো অন্ধ শেকলের
মুখোমুখি আমরা তুলে ধরি আমাদের উদ্ধত দর্পিত সৌন্দর্য:
আদিম ঝরনার মতো অজস্র ধারায় ফিনকি দেয়া টকটকে লাল রক্ত,
চাবুকের থাবায় সুর্যের টুকরোর মতো ছেঁড়া মাংস
আর আকাশের দিকে হাতুড়ির মতো উদ্যত মুষ্টি।
শাঁইশাঁই চাবুকে আমার মিশ্র মাংসপেশি পাথরের চেয়ে শক্ত হয়ে ওঠে
তুমি হয়ে ওঠো তপ্ত কাঞ্চনের চেয়েও সুন্দর।
সভ্যতার সমস্ত শিল্পকলার চেয়ে রহস্যময় তোমার দু-চোখ
যেখানে তাকাও সেখানেই ফুটে ওঠে কুমুদকহ্লার
হরিণের দ্রুত ধাবমান গতির চেয়ে সুন্দর ওই ভ্রূযুগল
তোমার পিঠে চাবুকের দাগ চুনির জড়োয়ার চেয়েও দামি আর রঙিন
তোমার দুই স্তন ঘিরে ঘাতকের কামড়ের দাগ মুক্তোমালার চেয়েও ঝলোমলো
তোমার ‘অ, আ’ –চিৎকার সমস্ত আর্যশ্লোকের চেয়েও পবিত্র অজর
তোমার দীর্ঘশ্বাসের নাম চন্ডীদাস
শতাব্দী কাঁপানো উল্লাসের নাম মধুসূদন
তোমার থরোথরো প্রেমের নাম রবীন্দ্রনাথ
বিজন অশ্রুবিন্দুর নাম জীবনানন্দ
তোমার বিদ্রোহের নাম নজরুল ইসলাম
শাঁইশাঁই চাবুকের আক্রোশে যখন তুমি আর আমি
আকাশের দিকে ছুঁড়ি আমাদের উদ্ধত সুন্দর বাহু, রক্তাক্ত আঙুল,
তখনি সৃষ্টি হয় নাচের নতুন মুদ্রা;
ফিনকি দেয়া লাল রক্ত সমস্ত শরীরে মেখে যখন আমরা গড়িয়ে পড়ি
ধূসর মাটিতে এবং আবার দাঁড়াই পৃথিবীর সমস্ত চাবুকের মুখোমুখি,
তখনি জন্ম নেয় অভাবিত সৌন্দর্যমন্ডিত বিশুদ্ধ নাচ;
এবং যখন শেকলের পর শেকল চুরমার ক’রে ঝনঝন ক’রে বেজে উঠি
আমরা দুজন, তখনি প্রথম জন্মে গভীর-ব্যাপক-শিল্পসম্মত ঐকতান-
আমাদের আদিগন্ত আর্তনাদ বিশশতকের দ্বিতীয়ার্ধের
একমাত্র গান।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তোমার রাইফেল থেকে বেরিয়ে আসছে গোলাপ
তোমার মেশিনগানের ম্যাগাজিনে ৪৫টি গোলাপের কুঁড়ি
তুমি ক্যামোফ্লেজ করলেই মরা ঝোপে ফোটে লাল ফুল
আসলে দস্যুরা অস্ত্রকে নয় গোলাপকেই ভয় পায় বেশি
তুমি পা রাখলেই অকস্মাৎ ধ্বংস হয় শত্রুর কংক্রিট বাংকার
তুমি ট্রিগারে আঙুল রাখতেই মায়াবীর মতো যাদুবলে
পতন ঘটে শত্রুর দুর্ভেদ্য ঘাঁটি ঢাকা নগরীর
তোমার রাইফেল থেকে বেরিয়ে আসছে ভালোবাসা
সর্বাঙ্গে তোমার প্রেম দাউদাউ জ্বলে
তুমি পা রাখতেই প্রেমিকার ব্যাকুল দেহের মতো যশোর কুমিল্লা ঢাকা
অত্যন্ত সহজে আসে তোমার বলিষ্ঠ বাহুপাশে
আর তোমাকে দেখলেই উঁচু দালানের শির থেকে
ছিঁড়ে পড়ে চানতারামার্কা বেইমান পতাকা
তোমার রাইফেল থেকে বেরিয়ে আসছে জীবন
তুমি দাও থরোথরো দীপ্ত প্রাণ বেয়নেটে নিহত লাশকে
তোমার আগমনে প্রাণ পায় মরা গাছ পোড়া প্রজাপতি
তোমার পায়ের শব্দে বাঙলাদেশে ঘনায় ফাল্গুন
আর ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই বিধ্বস্ত বাগানে
এক সুরে গান গেয়ে ওঠে সাত কোটি বিপন্ন কোকিল
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমি তখন ছিলাম এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অতি সুন্দর আর বিখ্যাত
পোলক ছাত্রাবাসগুলোর একটিতে। তার নাম ছিলো গ্র্যান্ডভবন। পাহাড়ের
পায়ের নিচে সবুজের মধ্যে ছিলো ছাত্রাবাসটি, যার জানালায় ভোরবেলায়
ডানা ঝাপটাতো উত্তর সাগর থেকে আসা সমুদ্রচিলেরা। গ্র্যান্ডভবনে থাকতো
নারী পুরুষ দু'লিঙ্গেরই ছাত্র।
গ্রীষ্মকালে ছাত্রাবাসে দেশী ছাত্র- ছাত্রীদের থাকতে দেওয়া হতো না। গ্রীষ্ম শুরু
হলেই তারা কোনো কাজ নিয়ে চলে যেতো ছাত্রাবাস থেকে। পড়ে থাকতাম
আমরা বিদেশি ছাত্ররা। এপ্রিল এলেই ছাড়াবাড়ির মতো হয়ে উঠতো
গ্র্যান্ডভবন, তার বারান্দায় বইতে থাকতো হাহাকারভরা হাওয়া।
আমার কক্ষ থেকে কয়েক কক্ষ দূরেই ছিলো এক পাকিস্তানি ছাত্র।
গ্র্যান্টভবনে সকলে রান্না করে খেতে হয়, সেখানেই প্রথম দেখা হয়
পরস্পরের সাথে অধিবাসীদের। রান্নাঘরটি আসলে ছিলো মিলন কেন্দ্র, রান্না
করতে করতে এবং খেতে খেতে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতো আমাদের। আমি আর
ওই পাকিস্তানিটি প্রথমেই একে অন্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলাম।
আমরা একে অন্যকে কখনো 'হাই' বা 'গুডইভনিং' বলি নি। পাশাপাশি রান্না
করেছি। মনে মনে খুন করেছি একে অন্যকে।
আমার মুক্তিযুদ্ধ- কবি হুমায়ুন আজাদ (২৮.৪.১৯৪৭ - ১১.৮.২০০৪)। প্রথম প্রকাশ ২০ মার্চ ১৯৯৩, সংবাদপত্রে। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের
একুশে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী কবির অনেকগুলো লেখার সংকলন বই আকারে প্রকাশ করে "আমাদের বইমেলা" নামে। আমরা কৃতজ্ঞ রায়হান
আবীরের কাছে কারণ আমরা পেয়েছি তাঁর সচলায়তন ওয়েবসাইটের এই পাতা থেকে । লেখাটি আমাদের মতে একটি নিখাদ কবিতা।
এক গ্রীষ্মে, জুন মাসের এক বিকেলে একলা থেকে থেকে, চারপাশে কোন
উল্লসিত তরুণ আর ঝলমলে তরুণীর মুখ না দেখে দেখে বিষণ্ণ বোধ করছি।
গানে মন ভরছে না 'প্লেবয়' সুখ দিচ্ছে না, বিয়ার শুধুই বিষাক্ত লাগছে।
আমি আমার চারতলার জানালার বিশাল পর্দা সরিয়েই দেখি পাকিস্তানিটি
বাগানের সবুজের মধ্যে বসে আছে সোনার থেকে সোনালি চুলের একটি
তরুণীর সাথে। পাকিস্তানিটি, আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, অবিরাম কথা বলে
চলছে, তরুণীটি মাথা নাড়ছে। তার চুল বিকেলের সোনায় ভরে দিচ্ছে। সেই
চুলের সোনা যেন এসে ঢুকছে আমারও ঘরে, আর আমারও বুকে।
বুঝতে পারলাম পাকিস্তানিটি আপ্রাণ সাধনা করে চলছে। বুঝতে পারলাম
ওই তরুণীটিকে অন্তত একটি রাত্রির জন্য জয় করার জন্য পাগল হয়ে উঠেছে
পাকিস্তানিটি। হয়তো বলে চলেছে অজস্র মধুর মিথ্যে। পাকিস্তানিরাও মুগ্ধ
হয়? সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়? আমার মনে প্রশ্ন জাগলো এবং আমি খুবই বিস্মিত
হলাম।
এই মেয়েটি যদি পাকিস্তানিটির ঘরে যায়, তাহলে মেয়েটিকে সে কী করবে?
আমি ভাবতে লাগলাম। মেয়েটিকে কি সে চুমো খাবে? মেয়েটির সোনালি
চুলের ঘ্রাণ নেবে? নাকি ধর্ষণ করবে? আমার মনে হয়তো পটিয়ে ঘরে
নিতে পারলেই পাকিস্তানিটি ধর্ষণ করবে ঐ সোনালিকে। আমার মনে হতে
লাগলোঃ পাকিস্তানঃ ধর্ষণ, পাকিস্তানঃ ধর্ষণ, ধর্ষণ ...
একটু পরেই রান্নাঘরে ঢুকে যেই আমি রান্না শুরু করেছি, দেখি পাকিস্তানিটি
ঢুকলো মেয়েটিকে নিয়ে।
মেয়েটি ঢুকেই আমার বললোঃ হাই!
আমিও বললামঃ হাই!
মেয়েটি একটি টেবিলে বসলো। পাকিস্তানিটি রান্না করতে লাগলো, আমি রান্না
করতে লাগলাম,। পাকিস্তানিটি বড়ো বড়ো মুরগির রাণ ভাজতে লাগলো।
আমি দেখতে লাগলাম পাকিস্তানিটি সোনালি মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে।
রান্নার পর ওরা বসলো ও পাশের টেবিলে, আমি এ- পাশের। মাংস ছিঁড়তে
গিয়ে মুখ তুলতেই মেয়েটির চোখ পড়লো আমার মুখের ওপর, আমার চোখ
পড়লো তার মুখের ওপর। দুজনেই হাসলাম।
পাকিস্তানিটি মেয়েটির প্লেট উপচে দিয়েছে ভাতে আর মাংসে। মেয়েটি ঐ
টেবিল থেকে আমকে জিজ্ঞেস করলোঃ তুমি কোথা থেকে এসেছো?
বাঙলাদেশ! আমি বললাম' এবং জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কোথা থেকে
এসেছো?
বাঙালাদেশ! বলে মেয়েটি বিস্ময়ে চিৎকার করে উঠলো। বললো, তোমাদের
ওখানে খুব যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তানের সাথে।
পাকিস্তানিটি চোয়াল শক্ত করে তাকালো মেয়েটির দিকে।
মেয়েটি জানালো সে ফরাসি দেশ থেকে বেড়াতে এসেছে।
আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম, বাঙলাদেশ সম্বন্ধে আর কিছু জানো তুমি?
মেয়েটি বললো, নাহ! আর কিছু জানি না।
আমি বললাম, ফরাসিদেশ সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানি।
মেয়েটি অবাক হয়ে বললো, কী জানো? আর কী জানো?
আমি বললাম, বদলেয়ার।
মেয়েটি অনেকটা চিৎকার করে উঠলো, আমার প্রিয় কবি!
আমি বললাম, র্যাঁবো।
মেয়েটি আবার চিৎকার করে উঠলো, আমার আরেক প্রিয় কবি।
আমি বললাম, মালার্মে।
মেয়েটি আবারো চিৎকার করে উঠলো, আমার আরেক প্রিয় কবি।
আমি দেখতে পেলাম কবিদের নামগুলো পাকিস্তানিটির বুকে তোপের মতো
গিয়ে লাগছে। কবিতায় মেয়েটির বুক ভরে উঠেছে, কিন্তু তার পাশের
পাকিস্তানিটির বুকে কোনো কবিতা নেই! তার দেহ ভরে কামক্ষুধা, বুকের
ভেতর ধর্ষণকারীর হিংস্রতা। মেয়েটি ওই টেবিল আর আমি এই
টেবিল থেকে কবিতার পংক্তি আবৃত্তি করতে লাগলাম। মেয়েটি একসময়
পাকিস্তানিটিকে জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি কবিতা পছন্দ করো? পাকিস্তানিটি
রেগে বললো, আমি কবিতা টবিতা পছন্দ করিনা।
মেয়েটি অবাক হয়ে বললো, তাহলে তুমি বাঁচো কিভাবে?
আমি জানি পাকিস্তানিরা কবিতা ছাড়াই বাঁচে, রক্ত খেয়ে বাঁচে, কিন্তু মেয়েটি
জানে না।
পাকিস্তানিটি ফুলতে ফুলতে একসময় ফেটে পড়লো। সে তার পাকিস্তানি
ইংরেজি ছেড়ে উর্দুতে চিৎকার করে উঠলো, এই বাঙালি তুমি আমার মাল
ভাগাইয়া লইয়া যাইতেছ।
আমি তাকে বললাম, আমি উর্দু বুঝি না, ইংরেজি বা বাঙলায় বলো।
পাকিস্তানিটি রাগে গম্ভীর হয়ে বসে রইলো, আমরা খেতে খেতে কবিতার কথা
বলতে লাগলাম।
আমাদের খাওয়া শেষ হলো। আমি থালাবাসন ধুতে লাগলাম।
মেয়েটি এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো, আমি কি তোমার সাথে তোমার
ঘরে যেতে পারি? কবিতা নিয়ে আলাপ করতে পারি?
আমি বললাম, অবশ্যই। তাতে সন্ধ্যাটি চমৎকার কাটবে।
পাকিস্তানিটি খুব শব্দ করে এসে মেয়েটিকে বললো, আমি চললাম।
মেয়েটি তাকে বললো, শুভরাত্রি।
সশব্দে দরজা ঠেলে পাকিস্তানিটি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমরা দুজন
আমার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।
দু'দিন পরে দেখি পাকিস্তানিটি তার বড়ো বড় স্যুটকেস নিয়ে গ্র্যান্ডভবন
থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। সে আর ছাত্রাবাসে ফিরে আসে নি, তাকে আর
কোনদিন দেখি নি।
এ ঘটনার নাম আমি দিয়েছি 'আমার মুক্তিযুদ্ধ'। আমি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ
করেছিলাম একাত্তরের কয়েক বছর পর, বাঙলাদেশ থেকে সুদূর এডিনবরায়।
একটি হানাদারকে খুন করার সুখে আজো আমার বুক ভরে আছে।
. @@@@@@@@@@@@@@@@@@@@@
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমরা গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঁঝে যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বারবারা
ভিয়েতনামের উপর তোমার অনুভূতির তরজমা আমি পড়েছি-
তোমার হৃদয়ের সুবাতাস
আমার গিলে-করা পাঞ্জাবিকে মিছিলে নামিয়েছিল
প্রাচ্যের নির্যাতিত মানুষগুলোরজন্যে অসীম দরদ ছিল সে লেখায়
আমি তোমার ওই একটি লেখাই পড়েছি
আশীর্বাদ করেছিলাম, তোমার সোনার দোয়াত কলম হোক।
আমার বড়ো জানতে ইচ্ছে করে বারবারা, তুমি এখন কেমন আছ ?
নিশ্চয়ই তুমি ডেট করতে শিখে গেছ।
গাউনের রঙ আর হ্যাট নিয়ে কি চায়ের টেবিলে মার সঙ্গে ঝগড়া হয়?
অনভ্যস্ত ব্রেসিয়ারের নিচে তোমার হৃদয়কে কি চিরদিন ঢেকে দিলে।
আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে বারবারা।
তোমাদের কাগজে নিশ্চয়ই ইয়াহিয়া খাঁর ছবি ছাপা হয়-
বিবেকের বোতামগুলো খুলে হৃদয় দিয়ে দেখো
ওটা একটা জল্লাদের ছবি
পনেরো লক্ষ নিরস্ত্র লোককে ঠাণ্ডা মাথায় সে হ্ত্যা করেছে
মানুষের কষ্টার্জিত সভ্যতাকে সেগলা টিপে হত্যা করেছে
অদ্ভুত জাদুকরকে দেখ
বিংশ শতাব্দীকে সে কৌশলে টেনে হিঁচড়ে মধ্যযুগে নিয়ে যায়।
দেশলাইয়ের বাক্সর মতো সহজে ভাঙে
গ্রন্থাগার, উপাসনালয়, ছাত্রাবাস,
মানুষের সাধ্যমত ঘরবাড়ি
সাত কোটি মানুষের আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের ফুলকে সে বুট জুতোয়
থেতলে দেয়।
২
টু উইমেন ছবিটা দেখেছ বারবারা ?
গির্জার ধর্ষিতা সোফিয়া লোরেনকেদেখে নিশ্চয়ই কেঁদেছিলে
আমি কাঁদিনি, বুকটা শুধু খাঁ খাঁ করেছিল-
সোফিয়া লোরেনকে পাঠিয়ে দিয়ো বাংলাদেশে
তিরিশ হাজার রমণীর নির্মম অভিজ্ঞতা শুনে
তিনি শিউরে উঠবেন।
অভিধান থেকে নয়
আশি লক্ষ শরণার্থীর কাছে জেনে নাও, নির্বাসনের অর্থ কী ?
জর্জ ওয়াশিংটনের ছবিওলা ডাকটিকেটে খোঁজ থাকবে না
স্বাধীনতার
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাছে এসো-
সাধু অ্যাবের মর্মর মূর্তিকে গণতন্ত্র আর মানবতার জন্য
মালির ঘামে ভেজা ফুলের তোড়া দিয়োনা-
নিহত লোকটি লজ্জায় ঘৃণায় আবার আত্মহত্যা করবে।
বারবারা এসো,
রবিশঙ্করের সুরে সুরে মুমূর্ষু মানবতাকে গাই
বিবেকের জংধরা দরোজায় প্রবল করাঘাত করি
অন্যায়ের বিপুল হিমালয় দেখে এসে ক্রুদ্ধ হই, সংগঠিত হই
জল্লাদের শাণিত অস্ত্র
সভ্যতার নির্মল পুষ্পকে আহত করার পূর্বে,
দর্শন ও সাহিত্যকে হত্যা করার পূর্বে
এসো বারবারা বজ্র হয়ে বিদ্ধ করি তাকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আজ রাত্রে বালিশ ফেলে দাও, মাথা রাখো পরস্পরের বাহুতে,
শোনো দূরে সমুদ্রের স্বর, আর ঝাউবনে স্বপ্নের মতো নিস্বন,
ঘুমিয়ে গোড়ো না, কথা ব'লেও নষ্ট কোরো না এই রাত্রি-
শুধু অনুভব করো অস্তিত্ব।
কেন না কথাগুলোকে বড়ো নিষ্ঠুরভাবে চটকানো হ'য়ে গেছে,
(কোনো উক্তি নির্মল নয় আর, কোনো বিশেষণ জীবন্ত নেই ;
তাই সব ঘোষণা এত সুগোল, যেন দোকানের জানালায় পুতুল-
অতি চতুর রবারে তৈরি, রঙিন।
কিন্তু তোমরা কেন ধরা দেবে সেই মিথ্যায়, তোমরা যারা সম্পন্ন,
তোমরা যারা মাটির তলায় শস্যের মতো বর্ধিষ্ণু?
বোলা না 'সুন্দর' বোলা না "ভালোবাসা' উচ্ছাস হারিয়ে ফেলো না
নিজেদের---
শুধু আবিষ্কার করো, নিঃশব্দে।
এক নবদম্পতির উদ্দেশে চট্টগ্রামে (মুক্তিযুদ্ধের কবিতা) কবি বুদ্ধদেব বসু। কবিতাটি অশোক
কুমার ঘোষ ও সাগরময় ঘোষ সম্পাদিত, "দেশ" পত্রিকার বৈশাখ ১৩৭৮ (এপ্রিল-মে ১৯৭১) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। আবৃত্তি শিল্পী
শমীক হাজরার কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে NANDONIK TRIBUTE YouTube Channel ।
কবিতাটি ১৯৭১ সালের এপ্রিলে লেখা। বাংলাদেশের প্রথিতযশা সাহিত্যিক, অনুবাদক, গবেষক ও শিক্ষাবিদ, রাষ্ট্রীয় 'একুশে পদকে' ভূষিত অধ্যাপক মাহমুদ শাহ
কোরেশী লিখেছেন, এ কবিতা তাঁর ও তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে লেখা। তিনি লিখেছেন, ‘আগরতলায় থাকতে 'দেশ' পত্রিকায় বুদ্ধদেব বসুর একটি কবিতা বেরিয়েছিল
আমাদের উদ্দেশে, নাজমা অর্থাৎ আমার স্ত্রী নাসরিন ও শামসুদ্দিন, অর্থাৎ আমার নামের পরিবর্তিত রূপ...। সাব–রুম থেকে লেখা আমার চিঠি পেয়ে তিনি (বুদ্ধদেব
বসু) তাঁর একান্ত অনুগত সহকর্মী ড. নরেশ গুহকে আমার দেখভাল করবার কথা বলেছিলেন।’ (মাহমুদ শাহ কোরেশী, মুক্তিযুদ্ধের মিশন: আমার জীবন, ঢাকা,
২০১৭) প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার' গঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধ
পরিচালনার জন্য গঠিত প্রথম স্বাধীন সরকার -- 'মুজিবনগর সরকার'। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১-এর ১৭ এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে এই
সরকার শপথ গ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে বাংলাদেশ মিশন স্থাপন করে এবং বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক প্রতিনিধিদল প্রেরণ করে বহির্বিশ্বের সরকার ও
জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অন্যতম সক্রিয় সদস্য ছিলেন ড. মাহমুদ শাহ কোরেশী। স্বাধীন
বাংলাদেশ সরকার প্রেরিত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন - সিরিয়া-লেবাননে মোল্লা জালাল উদ্দীন এমএনএ এবং ড. মাহমুদ শাহ
কোরেশী। মাহমুদ শাহ কোরেশীর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল -- 'মুক্তিযুদ্ধের মিশন আমার জীবন'। সূত্র- ১ www.prothomalo.com/ ২ www.eyenews.news/
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
প্রাচ্যের গানের মতো শোকাহত, কম্পিত, চঞ্চল
বেগবতী তটিনীর মতো স্নিগ্ধ, মনোরম
আমাদের নারীদের কথা বলি, শোনো।
এ-সব রহস্যময়ী রমণীরা পুরুষের কণ্ঠস্বর শুনে
বৃক্ষের আড়ালে স’রে যায়-
বেড়ার ফোঁকড় দিয়ে নিজের রন্ধনে
তৃপ্ত অতিথির প্রসন্ন ভোজন দেখে
শুধু মুখ টিপে হাসে।
প্রথম পোয়াতী লজ্জায় অনন্ত হ’য়ে
কোঁচরে ভরেন অনুজের সংগৃহীত কাঁচা আম, পেয়ারা, চালিতা-
সূর্য্যকেও পর্দা করে এ-সব রমণী।
অথচ যোহরা ছিলো নির্মম শিকার
সকৃতজ্ঞ লম্পটেরা
সঙ্গীনের সুতীব্র চুম্বন গেঁথে গেছে-
আমি তার সুরকার- তার রক্তে স্বরলিপি লিখি।
মরিয়ম, যীশুর জননী নয় অবুঝ কিশোরী
গরীবের চৌমুহনী বেথেলহেম নয়
মগরেবের নামাজের শেষে মায়ে-ঝিয়ে
খোদার কালামে শান্তি খুঁজেছিলো,
অস্ফুট গোলাপ-কলি লহুতে রঞ্জিত হ’লে
কার কী বা আসে যায়।
বিপন্ন বিস্ময়ে কোরানের বাঁকা-বাঁকা পবিত্র হরফ
বোবা হ’য়ে চেয়ে দ্যাখে লম্পটেরক্ষুধা,
রিপোর্ট ১৯৭১ কবি আসাদ চৌধুরী। আবৃত্তি শুনুন কবিকণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে Nadim Iqbal YouTube Channel । বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত
“স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪১৩)। “শব্দ সৈনিক”
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
মায়ের স্নেহার্ত দেহ ঢেকে রাখে পশুদের পাপ।
পোষা বেড়ালের বাচ্চা চেয়ে-চেয়ে নিবিড় আদর
সারারাত কেঁদেছিলো তাহাদের লাশের ওপর।
এদেশে যে ঈশ্বর আছেন তিনি নাকি
অন্ধ আর বোবা
এই ব’লে তিন কোটি মহিলারা বেচারাকে গালাগালি করে।
জনাব ফ্রয়েড,
এমন কি খোয়াবেও প্রেমিকারা আসে না সহজ পায়ে চপল চরণে।
জনাব ফ্রয়েড, মহিলারা
কামুকের, প্রেমিকের, শৃঙ্গারের সংজ্ঞা ভুলে গ্যাছে।
রকেটের প্রেমে পড়ে ঝ’রে গ্যাছে
ভিক্টোরিয়া পার্কের গীর্জার ঘড়ি,
মুসল্লীর সেজদায় আনত মাথা
নিরপেক্ষ বুলেটের অন্তিম আজানে স্থবির হয়েছে।
বুদ্ধের ক্ষমার মূর্তি ভাঁড়ের মতন
ভ্যাবাচেকা খেয়ে প’ড়ে আছে, তাঁর
মাথার ওপরে
এক ডজন শকুন মৈত্রী মৈত্রী ক’রে
হয়তো বা উঠেছিলো কেঁদে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
নদীর জলে আগুন ছিলো
আগুন ছিলো বৃষ্টিতে
আগুন ছিলো বীরাঙ্গনার
উদাস-করা দৃষ্টিতে।
আগুন ছিলো গানের সুরে
আগুন ছিলো কাব্যে,
মরার চোখে আগুন ছিলো
এ-কথা কে ভাববে?
কুকুর-বেড়াল থাবা হাঁকায়
ফোসে সাপের ফণা
শিং কৈ মাছ রুখে দাঁড়ায়
জ্বলে বালির কণা।
আগুন ছিলো মুক্তি সেনার
স্বপ্ন-ঢলের বন্যায়-
প্রতিবাদের প্রবল ঝড়ে
কাঁপছিলো সব-অন্যায়।
এখন এ-সব স্বপ্নকথা
দূরের শোনা গল্প,
তখন সত্যি মানুষ ছিলাম
এখন আছি অল্প।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
হাল ছেড়ে দিলো মোগোল পাঠান
ফার্সী পড়েন তাতেই
শেখানো বুলিতে ঠোঁট নেড়ে যাই
আমরা সেই সে জাতি
কেউ লাথি দিলেই ধরিতো চরণ
লাগেনি তো মহারাজ?
কেউ প্রেম দিলে ঘাড়ে চেপে করি
রক্তের কারুকাজ
কেউ ডানে আছে কেউ বামে হেলে
সামনে পেছনো কেউ
নিজেদের কথা বলি না, শুনিনা
সমানে ডাকছে কেউ
কত রাজা এলো চলে গেলো তারা
আছে এই নীলাকাশ
এই মাটি ছিলো আজও আছে তাই
আছে নদী ফুল ফুল ঘাস
অনেক দুঃখের কত নিশি গেলো
ওজাগরে ওজাগরে
ছোটো খাটো ব্যথা মান অপমান
লেগে আছে প্রতি ঘরে
এরই নাম স্বাধীনতা ? কবি আসাদ চৌধুরী। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী কাজী রাহনুমা নূর-এর কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে Kazi
Rahnuma Noor YouTube Channel । কবিতার কথা শুনে লেখা ।
স্বাধীনতা বহু নিয়েছিলো প্রাণ
দিয়েছিলো বুকে আশা
জীর্ণ বক্ষে ফুটলো তুফান
মূক মুখে পেলো ভাষা
ভাগ করে নেবো দুঃখ অভাব
ভাগ করে নেবো সুখ
ক্ষমা করে দেবো সব দোষ ত্রুটি
ছোটোখাটো ভুলচুক
স্বাধীনতা এলো রক্তে রঙীন
স্বাধীনতা এলো দেশে
চোর বাটপার টাউট দালাল
চুষে নিলো অবশেষে
মরার কাফন ভাতের লবণ
কেড়ে নিলে স্বাধীনতা
ওঠে আহা জারি প্রতি ঘরে ঘরে
এরই নাম স্বাধীনতা!?
নদী আছে ঠিক আগের মতোই
আকাশ এখনও নীল
ম'রে ম'রে যারা আজও আছি বেঁচে
হৃদয়ে দিয়েছি খিল
চোখ আছে তবু দেখি না কিছুই
জিভ আছে তবু বোবা
মরে বেঁচে আছি তবুও শরীরে
জামাকাপড়ের শোভা
স্বাধীনতা এসো উদ্দাম হয়ে
বাংলার প্রতি ঘরে
ভয় লোভ সব দূর হয়ে যাক
সত্যের অক্ষরে
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ফাগুন এলেই পাখি ডাকে
থেকে থেকেই ডাকে
তাকে তোমরা কোকিল বলবে? বলো।
আমি যে তার নাম রেখেছি আশা,
নাম দিয়েছি ভাষা,
কতো নামেই তাকে ডাকি
মেটে না পিপাসা।
ফাগুন আনে ফুলের তোড়া
কখনও প্রতিবাদে
ফাগুন যেন পাগলা ঘোড়া,
মানতে চায় না বাঁধে।
ফাগুন এলেই অলি এসে জোটে
কলিরা পায় লোটে,
তাকে তোমরা শহীদ মিনার বলো।
আমি যে তার নাম রেখেছি ফেরা,
নিজের ঘরে ফেরা,
পথে থেকে যে পথে ওড়ে
তেমন বিহঙ্গেরা।
ফাগুন যেন ফুফুর আরশি
দেখি নিজের মুখ,
ফাগুন শেখায়, শুধরে লও হে
জীবনের ভুলচুক।'
ফাগুন এলেই কবি আসাদ চৌধুরী। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী কাজী শহীদ শওকতের কণ্ঠে,
ভিডিওটি সৌজন্যে Kazi Shahid YouTube Channel । কবিতার কথা শুনে লেখা ।
ফাগুন এলেই একটি পাখি শাখে
থেকে থেকেই ডাকে।
কোকিল বলবে তাকে? বলো।
ফাগুন এলেই অলি এসে জোটে
কলিরা পায় লোটে
বলবে তাকে শহীদ মিনার? বলো।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আজ বিজয় উৎসব
নদীগুলো, আমাদের দুঃখী গাঙগুলো,
অকস্মাৎ সর্ব অঙ্গে তরুণের উল্লাস আবেগ
নিয়ে মেতে উঠে কী হলো, হয়েছে কি?
ব্যাগ্র কণ্ঠে শুধায় রূপালী মাছ---
উন্মত্ত নদীর নৃত্যকে কে দেবে জবাব?
অসীম আকাশ তার সব ক'টা দিক থেকে
সূর্যগুলো জ্বেলে দেই
এরই প্রশ্ন শুধাই---
বিহঙ্গ কোন মন গগনের মুখে রাশি রাশি হাসি
সুতীব্র আলোক ছটা গ্রামে গঞ্জে শহরে বন্দরে
কলে কারখানায় উপাসনা গৃহে ইস্কুল ছাত্রাবাসে
সেই আলো ভেঙে ভেঙে পড়ে
আলোর পথের যাত্রী এক নয়, লক্ষ লক্ষ
হাতের মুঠোয় মৃত্যু নিয়ে যাঁরা মেতেছিলো
ফিরে আসছে স্বজন হারানো ব্যাথা বুকে নিয়ে
গৃহপালিত পশুর উল্লাস ধ্বনির সাথে মিশে
বাঘ ও শেয়ালের সাপের ও কুমীরের
আরও কত অজানা পশুর হর্ষ রব
গাইতে জানিনে, তাতে এমন কি হলো
এসো কলরব করি, সবে মিলে কোলাহল করি
আজ বিজয় উৎসব
আজ বিজয় উৎসব কবি আসাদ চৌধুরী। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী মোঃ আব্দুল হাফিজের
কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে HT broadcasting YouTube Channel । কবিতার কথা শুনে লেখা ।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ভোরের আলো এসে পড়েছে ধ্বংসস্তূপের ওপর।
রোস্তোরাঁ থেকে যে ছেলেটা রোজ
প্রাতঃরাশ সাদিয়ে দিতো আমার টেবিলে
তে-রাস্তার মোড়ে তাকে দেখলাম শুয়ে আছে রক্তাপ্লুত শার্ট প'রে,
প্রতিরোধের চিহ্ন নিয়ে বিবর্ণ রাজধানী দাঁড়িয়ে রয়েছে,
তার বিশাল করিডোর শূন্য।
শহর ছেড়ে চলে যাবে সবাই
(এবং চলে যাচ্ছে দলে দলে)
কিন্তু এই ধ্বংস্তূপ স্পর্শ ক'রে আমরা কয়েকজন
আজীবন র’য়ে যাবো বিদীর্ণ স্বদেশে, স্বজনের লাশের আশেপাশে।
তাই তার দেখা পাবো ব'লে দানবের মতো খাকি ট্রাকের
অনুর্বর উল্লাস উপেক্ষা ক'রে, বিধ্বস্ত ব্যারিকেডের পাশ ঘেঁষে
বেরিয়েছি ২৭শে মার্চের সকালে কান্নাকে কেন্দ্রীভূত ক'রে
যে শিলা অস্তিম প্রতিজ্ঞায় অন্তত
প্রাথমিক অস্ত্র হ'তে জানে। তেমনি এক শিলার আঘাতে
বিনষ্ট হয়েছে আমার বুকের অনিদ্র ভায়োলিন।
ধ্বংসস্তূপের পাশে, ভোরের আলোয়
একটা বিকলাঙ্গ ভায়োলিনের মতো --- দেখলাম তে-রাস্তার মোড়ে
সমস্ত বাংলাদেশ পড়ে আছে আর সেই কিশোর, যে তাকে
ইচ্ছের ছড় দিয়ে নিজের মতো ক'রে বাজাবে ব'লে বেড়ে উঠছিলো
নিষিদ্ধ জর্নাল থেকে কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী লিজা চৌধূরী-এর কণ্ঠে, ভিডিওটি
সৌজন্যে Liza Chowdhury YouTube Channel। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি
পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
সেও শুয়ে আছে পাশে, রক্তাপ্লুত শার্ট প'রে।
তবে কি এই নিয়তি আমাদের, এই হিরণ্ময় ধ্বংসাবশেষ,
এই রক্তাপ্লুত শার্ট আজীবন, এই বাঁকাচোরা ভাঙা ভায়োলিন?
মধ্য-দুপুরে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে, একটা তন্ময় বালক
কাঁচ, লোহা, টুকরো ইট, বিদীর্ণ কড়ি-কাঠ, একফালি টিন
ছেঁড়া চট, জং ধরা পেরেক জড়ো করলো এক নিপুণ
ঐন্দ্রজালিকের মতো যত্বে
এবং অসতর্ক হাতে কারফিউ শুরু হওয়ার আগেই
প্রায় অন্যমনস্কভাবে তৈরি করলো কয়েকটা অক্ষর : “স্বা-ধী-ন-তা।"
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ইদানীং আমার সমস্ত আস্থা পাখিদের স্বাস্থ্যের ওপর,
শালিক, চড়ুই কিম্বা কাক ছাড়া কারো চোখ বিশ্বাস করি না,
পাখিদের সন্তস্ত চীৎকার ব্যতিরেকে শুভাকাঙ্ক্ষী কাউকে দেখি না,
সারাক্ষণ এভিন্যুর প্রত্যেকটি বাঁকে কেবল ওরাই থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে
হোটেল, রেস্তোরাঁ কিন্বা ব্যাঙ্ক অথবা টেলিগ্রাফের তারে, ছাদে
জানালায়, শার্সিতে, বারান্দায়, বুলেভারে রাস্তায় অথবা ফুটপাথে
অপেক্ষমাণ ডাক্তার অথবা দ্রুতগতি, শীতল নার্সের মতো নিরন্তর
কেবলই পাখিরা থাকে, লাফিয়ে-লাফিয়ে হাঁটে, ওড়ে কিম্বা বসে।
পাখিদের সতর্ক চীৎকারে টের পাই আমি
কখন, কোথায়, কোন্ পথে
কোন সব রক্তাক্ত স্ট্রীটের বাঁকে
আর্মার্ড-কার নিয়ে কাতারে কাতারে কারা
দাঁড়িয়ে রয়েছে : কার্বাইনের চকচকে উদ্যত নল
নীলরঙা আকাশের নীচে,
ঝলমলে শীতের দুপুরে
কার দিকে সুনিপুণ তাক ক'রে আছে,
কে কোথায় গড়াচ্ছে কোন্ পাঁচিলের পাশে
সদ্য গুলিবিদ্ধ কারা নদীর ভেতর থেকে
বুদ্বুদের ভাষায় প্রতিবাদ লিখে পাঠাচ্ছে বারবার
সকালে, দুপুরে কিন্বা সন্ধ্যায়
সব কিছু ব'লে দেয় পাখির চীতকার!
পাখিরা সিগন্যাল দেয় কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন,
প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন
থেকে।
চেকপোস্টের কাছে দীর্ঘ কিউ --- নতমুখে দেহ-তল্লাশির পর
দোকান খুলবে কেউ, আপিস পাড়ায় যাবে কিন্বা ফিরবে ঘর।
মাথার ওপরে শুধু ক'টা পাখি উপেক্ষা করছে সব মানা
অসম্ভব স্বাধীনতায় আকাশে উড্ডীন দেখি
আইডেন্টিটি কার্ডহীন ডানা॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
স্টেনগান গর্জনের শব্দে পাখিরা ঝাঁকে-ঝাঁকে উড়ে যায়,
বিকলপক্ষ কবিতা আমার তুমি এই জার্নালের মধ্যে,
কখনো অন্ধকার দেরাজে
গুটিশুটি মেরে মুখ বুজে
প’ড়ে আছো --- যেন মৃত রাজহাঁস,
নাকি কার্তুজশূন্য, জং-ধরা
ব্যবহারের অযোগ্য কোন প্রাচীন পিস্তল। অথচ তবুও
তোমার মমতা আমি কিছুতেই ছাড়াতে পারি না। যেদিন অচেনা
কয়েকটা গলা আর ভারি ট্রাকের আওয়াজ মাড়িয়ে
কুচকাওয়াজ-ভরা সন্ত্রাসে কেঁপে উঠলো এ তল্লাট
সার্চ-লাইটের আলোয়,
তখন যদিও ছিলো না অস্ত্র আমার কাছে, তবু ভয়ে
কেঁপে উঠেছিলো সারা বাড়ি। কিন্তু আমি,
কাপুরুষ, ভীরু, এই আমি অসীম সাহসে
চকচকে সঙীনবিদ্ধ হ'তে দিই নি তোমাকে
এমনকি তোমার অগ্ন্যুৎসবেও হই নি সহায়।
স্বাধীনতার সৈনিক যেমন উরুতে স্টেনগান বেঁধে নেয়,
কিন্বা সন্তর্পণে গ্রেনেড নিয়ে হাঁটে,
তেমনি আমিও
গুপ্তচরের দৃষ্টির আড়ালে অতি যত্নে লুকিয়ে রেখেছি
যেন তুমি নিদারুণ বিস্ফোরণের প্রতিশ্রুতিতে
খুব বিপজ্জনক হ’য়ে আছো।
কবিতা, অক্ষম অস্ত্র আমার কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে
অভিবাদন, প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য
সংকলন থেকে।
মনে আছে একদিন রাত্রে বাগানের মাটি খুঁড়ে
তোমাকে শুইয়ে দিয়েছি খুব যত্নে। কিন্তু যখন
কয়েকটা বিদেশী ভারি বুট তোমাকে
অকাতরে মাড়িয়ে কড়া নাড়লো দরোজায়
তুমি কিন্তু মাইন-এর মতো প্রতিরোধে
বিক্ষোরণ করো নি।
হে আমার শব্দমালা, তৃমি কি এখনও বৃষ্টি-ভেজা
বিব্রত কাকের মতো
আমার ক্ষমতাহীন ডাইরির পাতার ভেতরে বসে নিঃশব্দে ঝিমুবে,
তাহ'লে তোমার ধ্যানে আবাল্য দুর্নাম কিনে আমি
অনর্থক বড়াই করেছি।
মধ্যরাত্তি পর্যন্ত অনিদ্রা এবং অস্থির জাগরণ ছাড়া তুমি কিছু নও,
কপালে দাও নি তুমি রাজার তিলক কিন্বা প্রজার প্রতিশ্রুতি
তবে কেন হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছি তোমার পদমূলে।
বরং এসো করমর্দন ক'রে যে যার পথের দিকে যাই,
তবু আরো একবার বলি :
যদি পারো গর্জে ওঠো ফীল্ডগানের মতো অন্তত একবার ...
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
একটি আংটির মতো তোমাকে পরেছি স্বদেশ
আমার কনিষ্ঠ আঙুলে, কখনও উদ্ধত তলোয়ারের মতো
দীপ্তিমান ঘাসের বিস্তারে, দেখেছি তোমার ডোরাকাটা
জ্বলজ্বলে রূপ জ্যোৎস্নায়। তারপর তোমার উন্মুক্ত প্রান্তরে
কাতারে কাতারে কত অচেনা শিবির, কুচকাওয়াজের ধ্বনি,
যার আড়ালে তুমি অবিচল, অটুট, চিরকাল।
যদিও বধ্যভূমি হলো সারাদেশ --- রক্তপাতে আর্তনাদে
হঠাৎ হত্যায় ভ’রে গেল বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তর,
অথচ সেই প্রান্তরেই একদা ধাবমান জেব্রার মতো
জীবনানন্দের নরম শরীর ছুঁয়ে ঊর্ধ্বশ্বাস বাতাস বয়েছে।
এখন সেই বাতাসে শুধু ঝলসে যাওয়া স্বজনের
রক্তমাংসের ঘ্রাণ এবং ঘরে ফিরবার ব্যাকুল প্ররোচনা।
শৃংখলিত বিদেশীর পতাকার নীচে এতকাল ছিলো যারা
জড়োসড়ো, মগজের কুণ্ডলীকৃত মেঘে পিস্তলের প্রোজ্জ্বল আদল
শীতরাতে এনেছিলো ধমনীতে অন্য এক আকাঙ্ক্ষার তাপ।
ব্লাক আউটের পূর্ণিমায় কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী তামান্না ডেইজী-এর কণ্ঠে,
ভিডিওটি সৌজন্যে Tamanna Daisy YouTube Channel। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা
কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
আবাল্য তোমার যে নিসর্গ ছিলো নিদারুণ নির্বিকার,
সুরক্ষিত দুর্গের মতন আমাদের প্রতিরোধে সে হলো সহায়,
ব্লাক আউট অমান্য করে তুমি দিগন্তে জ্বেলে দিলে
বিদ্রোহী পূর্নিমা। আমি সেই পূর্ণিমার আলোয় দেখেছি :
আমরা সবাই ফিরছি আবার নিজস্ব উঠোন পার হ’য়ে
নিজেদের ঘরে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
চেয়ার, টেবিল, সোফাসেট, আলমারিগুলো আমার নয়
গাছ, পুকুর, জল, বৃষ্টিধারা শুধু আমার
চুল, চিবুক, স্তন, উরু আমার নয়,
প্রেমিকের ব্যাকুল অবয়বগুলো আমার
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
কবিতার লাবণ্য দিয়ে নিজস্ব প্রাধান্য বিস্তার
অন্তিমে উদ্দেশ্য যার?
কুচকাওয়াজ, কামান কিন্বা সামরিক সালাম নয়
বাগানগুলো শুধু আমার
মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, আন্তর্জাতিক সাহায্য তহবিল নয়
মিল-অমিলের স্বরবর্ণগুলো শুধু আমার
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
পররাষ্ট্রনীতির বদলে প্রেম, মন্ত্রীর বদলে কবি
মাইক্রোফোনের বদলে বিহ্বল বকুলের ঘ্রাণ?
টেলিফোন নয়, রেডিও নয়, সংবাদপত্র নয়
গানের রেকর্ডগুলো আমার
ডিষ্টেশন নয়, সেক্রেটারি নয়, শর্টহ্যাণ্ড নয়
রবীন্দ্রনাথের পোর্ট্রেটগুলো আমার
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন? কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী শিমুল মুস্তাফার কণ্ঠে,
ভিডিওটি সৌজন্যে Shimul Mustapha Official YouTube Channel। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা।
আমরা কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো
জেনারেলদের হুকুম দেবেন রবীন্দ্রচর্চার? মন্ত্রীদের
কিনে দেবেন সোনালি গীটার? ব্যাঙ্কারদের
বানিয়ে দেবেন কবিতার নিপুণ সমঝদার?
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো?
গীতবিতান ছাড়া কিছু রপ্তানি করা যাবে না বিদেশে
হ্যারিবেলাফোন্তের রেকর্ড ছাড়া অন্য কোনো আমদানি,
প্রতিটি পুলিশের জন্যে আয়োনেস্কোর নাটক
অবশ্য পাঠ্য হবে,
সেনাবাহিনীর জন্যে শিল্পকলার দীর্ঘ ইতিহাস ;
রাষ্ট্রপ্রধান কি মেনে নেবেন আমার প্রস্তাবগুলো,
মেনে নেবেন?
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট ক'রে চ'লে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
বন-বাদাড় ডিঙিয়ে
কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হ’য়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে
ভায়োলিন বোঝাই ক'রে
কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো---
এমন ব্যবস্থা করবো
বি-৫২ আর মিগ-২১গুলো
মাথার ওপর গোঁ-গোঁ করবে
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
চকোলেট, টফি আর লজেন্সগুলো
প্যারাট্রুপারদের মতো ঝ’রে পড়বে
কেবল তোমার উঠোনে প্রিয়তমা।
তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। আবৃত্তি শুনুন বাচিক শিল্পী আসাদুজ্জামান নূর-এর কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে Kobitar Shohor
Official YouTube Channel। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা” কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ
কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই . . . আমি এমন ব্যবস্থা করবো
একজন কবি কমাণ্ড করবেন বঙ্গোপসাগরের সবগুলো রণতরী
এবং আসন্ন নির্বাচনে সমরমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায়
সবগুলো গণভোট পাবেন একজন প্রেমিক, প্রিয়তমা !
সংঘর্ষের সব সম্ভাবনা, ঠিক জেনো, শেষ হয়ে যাবে---
আমি এমন ব্যবস্থা করবো, একজন গায়ক
অনায়াসে বিরোধী দলের অধিনায়ক হ'য়ে যাবেন
সীমান্তের ট্রেঞ্চগুলোয় পাহারা দেবে সারাটা বৎসর
লাল নীল সোনালি মাছ---
ভালোবাসার চোরাচালান ছাড়া সবকিছু নিবিদ্ধ হ"য়ে যাবে, প্রিয়তমা।
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো মুদ্বাস্কীতি কমে গিয়ে বেড়ে যাবে
শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা প্রতিদিন
আমি এমন ব্যবস্থা করবো গণরোষের বদলে
গণচুম্বনের ভয়ে
হন্তারকের হাত থেকে প’ড়ে যাবে ছুরি, প্রিয়তমা।
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
শীতের পার্কের ওপর বসন্তের সংগোপন আক্রমণের মতো
আ্যাকর্ডিয়ান বাজাতে-বাজাতে বিপ্লবীরা দাঁড়াবে শহরে,
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
স্টেটব্যাঙ্কে গিয়ে
গোলাপ কিন্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া
যাবে
একটি বেলফুল দিলে চারটি কার্ডিগান।
ভয় নেই, ভয় নেই
ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো
নৌ, বিমান আর পদাতিক বাহিনী
কেবল তোমাকেই চতূর্দিক থেকে ঘিরে-ঘিরে
নিশিদিন অভিবাদন করবে, প্রিয়তমা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
ক্রাচে ভর দিয়ে, দেখলাম, সে হাঁটছে চৌরাস্তায়,
একটা বল নিয়ে হুল্লোড় করতে করতে
একদল ছেলে
ভোরবেলাকার লাল আলোর ভেতর ঢুকে গ্যালো
সবচেয়ে বদ-মেজাজী রোগা লোকটা
স্বর্গোজ্জ্বল হাসির আভায়
পতাকা হাতে দাঁড়িয়েছে হাওয়া-লাগা ঠাণ্ডা বারান্দায়।
বাতাসে চুল উড়িয়ে
প্যান্টের পকেটে হাত রেখে আমিও এখন নেমেছি রাস্তায়,
দেয়ালের পোস্টারগুলো সকালের হিরণ্ময় রৌদ্রে
নিবিষ্ট মনে পড়তে পড়তে চ'লে যাবো ---
স্বাধীনতা, তুমি কাউকে দিয়েছো সারাদিন
টো-টো কোম্পানীর উদ্দাম ম্যানেজারী করার সুবিধা
কাউকে দিয়েছো ব্যারিকেডহীন দয়িতার ঘরে যাওয়ার রাস্তা
কাউকে দিলে অবাধ সম্পাদকীয় লেখার অপরূপ প্ররোচনা
উজ্জ্বল কিশোরকে ফের কবিতার আঁতুড় ঘর, মেঘের গহ্বর,
আর আমাকে ফিরিয়ে দিলে
মধ্যরাত পেরুনো মেঘলোকে ডোবা সকল রেস্তোরাঁ
স্বাধীনতা, তোমার জরায়ু থেকে
জন্ম নিলো নিঃসঙ্গ পার্কের বেঞ্চি,
দুপুরের জনকল্লোল
আর যখন-তখন এক চক্কর ঘুরে আসার
ব্যক্তিগত, ব্যথিত শহর, স্বাধীনতা!
স্বাধীনতার শহর কবি শহীদ কাদরী (১৮.৮.১৯৪২ - ২৮.৯.২০১৬)। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত কবির “তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা”
কাব্যগ্রন্থের কবিতা। আমরা কবিতাটি পেয়েছি ২০১০ সালে সাহিত্য প্রকাশ থেকে প্রকাশিত, “শহীদ কাদরীর কবিতা” কাব্য সংকলন থেকে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
নিবেদিতা,
তোমাকে দেখেছি আমি আগেও অনেক
দেখেছি পথের ভিড়ে, একুশের
সুকান্ত মিছিলে।
এবং কখনো কোন জলসায়
ভার্সিটির তর্কের আসরে, পাঠাগারে
মেটেরিয়া মেডিকার স্তূপীকৃত
জ্ঞানের সমুদ্রে।
নিবেদিতা,
তোমাকে দেখেছি আমি আগেও অনেক
বঙ্গোপসাগর তীরে, কিংবা কোন সবুজাভ।
হিলট্রাক্ট জুড়ে সাঁওতালী ছেলের হাতে,
মুক্তোময়ী ঝিনুকের খোলের ভেতারে।
তখনো তোমার চুল ভার্জিনিয়া
তামাকের দেশে, মূর্ছিত নেশার মত
তীব্রতর সুবাস ছড়ায় ;
বৃষ্টির নূপুর হয়ে সঙ্গীত শোনায়।
কোন এক নিবেদিতাকে কবি টি.এইচ. শিকদার। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে
সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪১৬)। প্রচারের তারিখ জানা যায়নি। “বেতার বাংলা” মার্চ, ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
আবৃত্তি শুনুন তনুজা বড়ুয়ার কণ্ঠে, ভিডিওটি সৌজন্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র থেকে বলছি YouTube Channel ।
সুচরিতা,
আজকে তোমাকে আমি দেখেছি আবার---
রক্তাক্ত বাংলাদেশে, খুলনা, কুমিল্লা, ঢাকা,
রংপুর, সিলেট আর কুষ্টিয়ার বিষণ্ণ সেক্টরে ;---
আহত আম্মার পাশে, ট্যাংকের
ভয়াল-চোখ গর্জনের মুখে,
প্রসন্ন ফুলের মতো উৎসর্গের তরে।
কি আশ্চর্য! এখন তোমার মন
অন্যভাবে, অনন্য ইচ্ছায়
নিবেদিত, সাত কোটি রক্তের সত্তায় :
সহস্র ধ্বংসের বাজ, মেশিনগান, মর্টারের স্তূপে
অকেটোপাশ-ডানা দেখি অনির্বাণ ভিসুভিয়ারের :
এবং তোমাকে দেখে, সমর্পিতা,
যদি আমি হতে পারি অন্য এক নিবেদিত প্রাণ॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মহান শহীদানের স্মরণের লেখা
প্রস্তর ফলকে বন্ধু তোমাদের নাম।
আমি হাঁটছি ২৫শে মার্চ থেকে
আমি হাঁটছি কালো-লাল এবং
সবুজ থেকে ঝলসানো স্বাধীনতা
পর্যন্ত।
এখন বন্ধুরা
স্থির হয়ে তাকিয়ে দ্যাখো
কেমন করে ঢেকে রেখেছি
তোমাদের স্মৃতিগাঁথা আমার বুকের মর্মরে।
জানো এখন আমার চোখ থেকে
সব আলো সি গ্যাছে।
দ্যাখো আমার চোখ দুটি কেমন করে
ঢেকে রেখেছি
রাশ রাশ জানা অজানা নামে।
আমি তবুও পড়তে পারি
(শিশু শিক্ষায় যেমন পড়তাম)
মানুষের হৃদয়ের পটে পটে
নামফলক কবি অনু ইসলাম। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে
সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪১৭)। প্রচারের তারিখ জানা যায়নি। “শব্দ সৈনিক”
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ থেকে সংকলিত। আবৃত্তি শুনুন তনুজা বড়ুয়ার কণ্ঠে,
ভিডিওটি সৌজন্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধঃ দলিলপত্র থেকে বলছি YouTube Channel । "যুদ্ধদলিল প্রকল্পের" পক্ষ থেকে তা
নতুন করে প্রকাশ করা হয়েছে।
লক্ষ লক্ষ মানুষের নাম।
(ওরা মানুষ নয় বীর)
সালাম,
বরকত,
মুক্তিযোদ্ধা
এবং শেখ
যেন একটি মানচিত্র!
আমার বুকের নিচে
রক্তের ঝরণা---
ঝরণার গানে গানে
শুধু শুনি লক্ষ নাম---
সালাম
রফিক
মুক্তিযোদ্ধা।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
তোমার দেহের মতো খর-কৃপাণের মতো
দীর্ঘ ও উদ্যত ঋজু
সারি সারি
শাল-তরু শ্রেণী
দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই পাশে ;
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর চুমু খেলে
বয়ে ও বিহ্বলতায়
ঘন কম্পন জাগে
তোমার দু'গালে ঠোঁটে, আজকে রাত্রেও তেমনি
উদগ্রীব অপেক্ষার
রুদ্ধ শিহরণ সাড়া
শাখে শাখে, শকুনের ডানার ঝাপটে যেন
ছে ওঠে ভয়াল সাগরে ;
তোমা ত্বকের রং যেন
তপ্ত কাঞ্চনের মতো
লেগে আছে সড়কের প্রতি ধূলিকণা সাথে,
চোখের মণির মতো সজল নিবিড় কালো
জমছে খণ্ড খণ্ড মেঘ
সারাটা আকাশময়
হয়তো নামবে বৃষ্টি একটু পরে,
যেমন শোণিত চুঁয়ে চুঁয়ে
হে স্বদেশ হে আমার বাংলাদেশ কবি মোহাম্মদ রফিক। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা
বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৫ নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪১৮)।
স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
পড়ছে তোমার পথে পথে
তাল ও তমাল শাখে,
শত্রুর সৈন্যের বেয়নেটে
তোমার প্রাণের মতো
উষ্ণ লাল রক্ত
যেমন ঝরছে
মাঠে মাঠে গঞ্জে বাটে ;
ক’জন চলেছি আমরা
সড়কের 'পর দিয়ে এই
একটি ট্রাকে ঠাসাঠাসি
উঁচিয়ে সঙ্গীন দৃপ্ত
আমরা চলেছি এই
নীরন্ধ্র রাতের মাঝামাঝি
তোমার প্রেমের ঋণ
রক্ত ঋণ
রক্ত দিয়ে শোধ করে দিতে ;
শুধু আলো হাওয়া চাঁদ,
বা সূর্যকিরণ নয়
তোমার শরীরে মাগো
বিকট দুর্গন্ধ আছে,
ক্লান্ত শ্রান্ত অবসন্ন সব
কচি কচি যোদ্ধাদের
ঘামে ভেজা ছেঁড়া গেঞ্জি
ময়লা বিছানা হ'তে
বিবমিষা ছুটে আসে ;
তোমার দেহের সাথে
এ-দুর্গন্ধে মাগো
আমাদের ভবিষ্যৎ যেন
নবজাতকের মতো
হাত পা বাতাসে ছুঁড়ে খেলা করছে ;
শুধু খালে বিলে মাঠে
নদীতে নালায় জলে
বা সীতাকুণ্ডুর
পর্বতমালার নয়,
এইসব বৃষ্টিভেজা
কাদামাথা তাঁবুতে তাঁবুতে ষেন
তোমার মানচিত্রখানি
কতগুলি
ছোট ছোট জারুল চারার মতো
উষ্ণ তাজা
হৃদয়ের সাথে লেপ্টে আছে।
বিভিন্ন টিলায় ট্রেঞ্চে
রাইফেল ট্রিগারে হাত চেপে
দেখছি প্রতিদিন
হাজার হাজার জীর্ণ অবসন্ন ধর্ষিতা নারীও
পুরুষের সাথে
শত্রুর সন্ত্রাস গুলি বেয়নেট বেড়াজাল
কি করে এড়িয়ে মা আমার
হেঁটে চলছে দল থেকে দলে
দৃপ্ত পায়ে
কুয়াশার আস্তরণ ছিঁড়ে
ভেঙেপড়া
প্রথম সূর্যের ক্ষীণ
আলোর রেখার মতো
কম্পমান সম্ভাবনার দিকে!
বহু পরে
অনেক রাতের শেষে
আঁধারের আস্তরণ ভেঙে
নির্দয় নিশ্চিত সূর্য
জরাজীর্ণ
দেয়াল ফাটলে বট
বৃক্ষের চারার মতো
যখন বেরিয়ে আসবে
ফেটে পড়বে
বহু প্রতিক্ষিত
সেই আনন্দিত ক্ষণে
হয়তো দেখবে
তোমার ঘরের পাশে
উজ্জ্বল পৈঠার 'পর
দু' একটি ফোঁটা
পুরনো মলিন রক্ত
লেগে আছে,
তখন কি
মনে পড়বে
প্রিয়তমা
আমরা ক'জন মিলে
অবিচল প্রত্যাশায়
তোমার প্রেমের ঋণ
রক্ত-ঋণ
সহস্র সহস্র কোটি
হায়েনা চীৎকারের মতো
সেই এক
পৈশাচিক অন্ধকার রাতে
চলে গেছি
রক্ত দিয়ে
শোধ করে।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
( এক )
সব কথা সব অনুভূতি যেন কোন এক বিষণ্ণ উদ্বেগে
হতবাক হয়ে আসে, ক্ষোভাচ্ছন্ন চেতনার উদ্দাম আবেগে
বাংলার মাঠে ঘাটে শহরে বন্দরে গ্রামে গ্রামে
রক্তঝরা মুহূর্তের তিমিরাঞ্চল-ছায়া নামে
শ্মশানের ভম্মে আর দুর্দিনের ক্লান্ত দীর্ঘশ্বাসে
আমাদের কাল শুধু বেদনায় ম্লান হয়ে আসে।
( দুই )
বাংলা দেখেছে তার সন্তানের মৃতদেহে
কেমন ভরেছে মাঠ নদী
বাংলা দেখেছে তার সন্তানের রক্তে রক্তে
হিমসিক্ত স্রোতের প্রবাহ
বাংলা জেনেছে তার অপমানে লাঞ্ছনায়
অন্ধকার নামে নিরবধি
বাংলা বুঝেছে তার নির্যাতন নিপীড়নে
কি দুঃসহ যাতনা-প্রদাহ।
ইতিহাস তবু কথা বলে
মুক্তির সেনাসূর্য প্রভাতের প্রতীক্ষায় জাগে পূর্বাচলে।
আমার স্বর্গের নামে কবি মযহারুল ইসলাম। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৫ নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪২২)। স্বাধীন বাংলা
বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
( তিন )
চারিদিকে শুধু সংগ্রাম আর যুদ্ধ
হাতিয়ার হাতে চলে মহা জয় যাত্রী
বাংলার খাম প্রান্তর ঘাট প্রতিরোধে বিক্ষুব্ধ
পূর্ব গগনে কাটে অভিশাপ-রাত্রি।
অযুত মৃত্যু, অনেক রক্ত সীমাহীন নিগ্রহ
পেরিয়ে এসেছে আজকের দিন অগ্নিশপথে স্নাত,
দিকে দিকে জাগে মহা অভিযান বিপ্লব বিদ্রোহ
বিজয়ের দিন মুক্তির দিন সম্মুখে প্রতিভাত।
( চার )
বাংলা আমার, স্বদেশ আমার, আমার বাংলাদেশ
রূপে রূপময়ী চিরমধুময়ী স্বর্গ আমার বিশ্বে
সজলা তটিনী সুনীল আকাশ চেয়ে দেখি অনিমেষ
সবুজে শ্যামলে নৃত্যে ও গানে নবীনা দৃশ্যে দৃশ্যে।
বিশ্বে আমার স্বর্গ বাংলাদেশ
জাগ্রত আমি সেই স্বর্গের নামে
তার প্রেমে নব-চেতার উন্মেষ
তারই অনুরাগে নামি মহাসংগ্রামে॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
গুরুদেব,
. তোমার সোনার বাংলা আজ
. শ্মশাম হয়ে গেছে।
. ফাগুনের আমের বনে
. মুকুলের গন্ধ আজ আর নেই
. বারুদের গন্ধে ভরেছে ফাগুনের বাতাস।
. অবারিত মাঠ গগন ললাট
. আজ উত্তপ্ত।
. দস্যুদের সেলের আঘাতে
. বাংলার শ্যামল রূপ বিপর্যস্ত।
. মেশিন গান, মর্টার আর বোমার আঘাতে
. বাংলার আকাশ বাতাস ভরে গেছে।
. হে রবীন্দ্রনাথ
. তোমার সোনার বাংলার আজ
. শ্মশান হয়ে গেছে।
হে বিদ্রোহী
. ওরা সাত কোটির মুখের গ্রাস
. কেড়ে নিতে চায়।
. ওরা বুলেটের আঘাতে বাঙালিকে
. নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
. ওই শোনো আকাশে বাতাসে
. নিপীড়িত মানুষের ক্রন্দন রোল
বাংলাদেশ কবি মিজানুর রহমান চৌধুরী। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৫ নভেম্বর ১৯৭১-এ প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪২৪)। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
. ওই দেখ অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
. রক্তের হোলি খেলায় মেতে গেছে।
. প্রস বন্ধু সেই শমসের নিয়ে
. আর একবার পদ্মার জলে মোরা
. লালে লাল হয়ে মরি।
. বাংলার পথ-প্রান্তর রক্তলেখায় পূর্ণ
. এস বন্ধু আজ মোদের রক্তলেখায়
. ওদের নিশ্চিহ করে দিই।
জীবনানন্দ
. তুমি দেখেছিলে রূপসী বাংলার
. রূপ মনোহর।
. পাখির নীড়ের মত চোখ দেখেছিলে---
. নাটোরের বনলতা সেনের।
. বাংলার ভাঁটফুল কদম্বের ডালে
. ধানসিঁড়ি নদীটির পারে
. ফিরে আসতে চেয়েছিলে
. এই বাংলায়।
. কিন্তু বন্ধু
. রুপসী বাংলার রূপ আজ বিবর্ণ
. পশ্চিমা হানদারের নির্মমতায়
. বাংলার মাঠে ঘাটে হাহাকার ধ্বনি
. প্রিয়া আজ দানবের হাতে বন্দিনী
. ধর্ষিতা তরণীর দিগন্ত বিদারী কান্না
. আজ বাতাসে কেঁদে মরছে।
. আশীর্বাদ করো বন্ধু
. প্রিয়ার দৃষ্টির অগ্নিশিখায যেন
. শত্রুর মুখ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সুকান্ত
. নবজাতকের কাছে অঙ্গীকার করে বলেছিলে---
. এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবে
. কিন্তু নরদানবের পৈশাচিকতায়
. অসংখ্য শিশু আজ অধিকার হারা।
. বুভুক্ষু জনতার অসহায় ক্রন্দন
. লাঞ্ছিত বঞ্চিত মানুষের ম্লান মুখ
. গভীর জিজ্ঞাসা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
. এসো আজ সিগারেটের মতো জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড হয়ে,
. দিয়াশলাইয়ের কাঠির মতো মুখে বারুদ নিয়ে
. এসো এই সংগ্রাম মাঝে
. নতুন আলোর মন্ত্র নিয়ে।
. ঠিকানা তোমার পেয়েছি বন্ধু
. ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, ভিয়েতনাম নয়
. স্নেহ মায়া মাখা, মমতা ঘেরা
. এই বাংলায়॥
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
মহামান্য বিচারকমণ্ডলী :
এখন থেকে দুই দশক পূর্বে
পবিত্র ধর্ম এবং আইনের দোহাই সাজিয়ে
বিশ্ববিবেক, বিশ্বমানবতার ধ্বজা উঁচিয়ে
আপনাদের আদালতে যাঁদের বিচার করেছিলেন
আদালতে শেষতম শান্তির বিধান দিয়েছিলেন
ঈশ্বর-দত্ত-প্রাণ রক্ষার অধিকার কেড়েছিলেন,
তারা প্রত্যেকেই নিরপরাধী এবং প্রত্যেকেই পুণ্যবান
এবং পবিত্র আইনের শ্লীলতাহানির অভিযোগে
মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে আপনারা অভিযুক্ত।
ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না---দুই দশক বিলম্বে
আসামীর কাঠগড়ায় আপনারা দাঁড়িয়ে
তার খাসা একখানা প্রমাণ নির্মাণ করলেন অন্তত।
বিশ্ববিবেকের যেসব মহানতম ব্যক্তিত্বকে
আপনারা সেদিন মানব সত্তা এবং সভ্যতা হন্তা হিসেবে
চিহ্নিত করেছেন, তার জন্য আমাদের দারুণ বিলাপ
এবং বিশ্বব্যাপী শোক সভার ঘটা অচিরেই শুরু হবে।
মহামান্য আদালত :
আমি অবশ্য কোটি কোটি মানুষের দুর্দশা এবং দুর্ভাগ্যের
জনক ফুয়েরারের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করছি
অবৈধ নুরেমবার্গ ট্রায়াল কবি মুসা সাদেক। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও
শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪২৬)। “শব্দ সৈনিক”
ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
আমি অবশ্যই ফুয়েরার দোসর বেনিটো মুসোলিনীর কথা ভাবছি
আমি অবশ্যই কূটনীতিক হের হেস, প্রচারবিদ গোয়েবলস, সমরবিদ তেজো
প্রভৃতি পুণ্যাত্মাদের নামও উপস্থাপন করছি ;
যাঁদেরকে আপনারা অবৈধ আইনের সত্তা অনুসরণ করে
ধর্মের দোহাই পেড়ে পাপাত্মা বলে চরম দণ্ড দিয়েছেন।
এইসব মহাপ্রাণদের ন্যুরেনবার্গ-ট্রায়াল-প্রহসনের মাধামে দণ্ড দিয়ে
সমগ্র বিশ্ব সভ্যতার যে অপূরণীয় ক্ষতি আপনারা করেছেন।
আজ তার হিসাব হবে, আজ তার বিচার হবে
না হলে মানব সভ্যতার বুকে মহা অভিশাপ ধার্য হবে।
হে ন্যুরেনবার্গ-ট্রায়ালের বিচারকমণ্ডলী :
ঈশ্বরের অসীম করুণা যে সত্য, ন্যায় ধর্ম এবং বিচার
অবশেষে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে---তোমরা কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছো
অবৈধ ন্যুরেনবার্গ-ট্রায়ালের তোমরা আসামী
ন্যুরেনবার্গ-ট্রায়ালের আসামীদের উত্তরসুরীরা আজ বিচাপতির আসনে
ভিয়েতনামের লক্ষ লক্ষ হত্যাযজ্ঞের পুরোহিত মহাত্মা রিচার্ড নিক্সন
বাংলাদেশের পঞ্চাশ লক্ষাধিক মানুষ হত্যার যোগ্য জনক, পুণ্যাত্মা এহিয়া
এবং অসংখ্য মাইলাই---ঐতিহ্যধারী পুণ্যাত্মারা।
আজকের মহামান্য আদালতের মহিমাত্বিত বিচারকমণ্ডলী।
আজকে বিচার হবে অবৈধ ন্যুরেনবার্গ-ট্রায়ালের বিচারকদের
আজকে বিচার হবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ অপরাধে হোচিমিনের
আজকে বিচার হবে বাংলাদেশ অপরাধে শেখ মুজিবের!!
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
বন্ধু, তোমার শহীদ মিনার রক্তে আমার রাঙিয়ে দেবো
স্বাধীনতার জয় পতাকা এই মিনারে উড়িয়ে যাবো।
বাংলার বুকে বেদনার ছায়া---হাসে না বাংলা সহজ গানে
হিংস্র স্বাপদ তীক্ষ্ণ নখরে সবুজ কুঁড়ির মৃত্যু আনে।
ঘন কালো রাত কালো শৃঙ্খল দুর্গম আজ পথের রেখা
তবুও রক্তে বান ডাকে জানি মুক্তি পথের মিলবে দেখা।
যুদ্ধক্লান্ত বন্ধু আমার, ঘুমাও শহীদ---মুক্তি সেনা---
তোমার রক্তে শপথ নিলাম শত্রুকে আজ হয়েছে চেনা।
গণ-শক্রর কল্জে ছিঁড়ে পিষবো পায়ে কসম ভাই---
আমার ভায়ের রক্তের ঋণ শুধতে হবে আপোস নাই।
সব শোষণের হিম কারাগার পদাঘাতে জানি গড়বে ধসে
গণ-যুদ্ধের রক্ত-ফসল তুলবো এবার যুদ্ধশেষে।
এদেশ আমার, কোটি জনতার---পরাধীনতার লগ্নশেষ
কৃষ্ণচূড়ার লাল গৌরবে আসে স্বাধীনতা---হাসে স্বদেশ।
লাল গৌরবে আসে স্বাধীনতা কবি রফিক নওশাদ। বিপ্রদাশ
বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে
সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত
কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪২৮)। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
আমি পেয়েছি খুঁজে এক বাস্তবিত মানোরম রাজ্য।
এ রাজ্যের কোথাও নির্ধারিত কোন সামরিক শাসনের নেই।
কড়া বিধি, খাঁচাবন্ধের ভয়।
এখানে সবার নির্বিকার বাধাহীন চলাফেরা,
মা'র কোলে দোল খাওয়া নিগূঢ় নিশ্চিত ঘুম
নিরপরাধ আঁচলে মাথা ঝুঁকানো স্মামীর সোহাগ
পুত্তুলি . . .
এ রাজ্যের সবচেয়ে বড়ো কথা, মূলত,
এখানে চিরায়ত নিয়মের সব পথঘাট, প্রান্তর, জলাশয় নদী
ছায়ান্ধ অন্ধকারে কতোকাল ঢেকেছিল ভয়াবহ জঙ্গল।
অতঃপর একদিন এ রাজ্যের আবালবৃদ্ধ হাত বুলিয়ে গভীর প্রেম,
একে একে সব আঁধারের পাষাণ পাহাড়, সারি সারি
সভয় জঙ্গল কেটে ভয়াল বাঘের চামড়ায়
শুতে দিল আজীবন ভীরু হরিণী ;
মায়ের অনিঃশেষ স্নেহের মতো বাড়াল সূর্য মুখ
এ সূর্য আর ডুবলো না কোনদিন,
ডুবে আবার প্রাত্যহিক বিশাল কালো নদীতে
মাথা ভাসানোর বুক ফুলালো না,
এ রাজ্যে সেই থেকে অন্ধকার নেই, প্রতি মুহূর্ত সূর্য,
সূর্য আর ডোবে না প্রতাহ
শুধু “আলোয় ভুবন ভরা”, “আলোর স্রোতে পাল তুলেছে
হাজার প্রজাপতি”॥
অন্বিষ্ট রাজ্য : আমার বাংলা কবি প্রণব চৌধুরী। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত
“স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৬ ডিসেম্বর,
১৯৭১ তারিখে প্রচারিত কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪২৯)। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের দলিলপত্র থেকে সংকলিত।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
রাত্রির শেষ---তমসার শেষ---পূর্ব দিগন্ত লাল
বন্দরে শুনি গর্জন আর সমুদ্র উত্তাল
দুঃস্বপ্নের ঘোর কেটে গেছে--- শংকার রাত শেষ
ধ্বংসের স্তূপে শিহরণ জাগে--- জীবন্ত উদ্দাম।
গর্জন-ভীতি শংকিত বুকে দুর্জয় সংগ্রাম
নবতর আজ চেতনার ধ্বনি---জীবনের ধ্বনি
কাল শেষ হয়ে গেল---রাত্রির শেষ---দিগন্ত আজ লাল।
বেদনার দিন, শোষণের দিন, জালিমের কাল শেষ
শাদ্দাদ কাঁপে ভীত-শংকিত। সব নমরুদ মুহ্যমান।
দুর্গের দ্বার ভেঙেছি ওদের কঠিন কঠোর প্রতিজ্ঞায়---
আমাদের আজ দুর্বার গতি-দুর্জয় হলো বাংলাদেশ
দুঃস্বপ্নের ঘোর কেটে গেল---শংকার রাত হয়েছে শেষ।
দিন এল আজ বিজয়ের দিন-উল্লাস-ধ্বনি দেশে।
বেদনার কথা মিলনের বাণী বিরহ বিধুর মন
সচেতন সব বঞ্চিতগণ---বিবেকের জাগরণ।
নব উত্থান---নতুন জাতির হৃদয়ে সূর্যোদয়
চঞ্চল চোখে উদ্দাম আশা মৃত্যুর পরাজয়।
দিন এলো কবি আবুল কাসেম সন্দীপ। বিপ্রদাশ বড়ুয়া সংকলিত ও সম্পাদিত “স্বাধীন বাংলা বেতার
কেন্দ্র ও শব্দসৈনিক” গ্রন্থে সংকলিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত
কবিতা, (পৃষ্ঠা ৪৩০)। “শব্দ সৈনিক” ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২ থেকে সংকলিত।
এই পাতার পশ্চাৎপটের ছবিটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কিছু বিখ্যাত ছবির কৃষ্ণকায় করা কোলাজ! রয়েছে বাংলাদেশের বীর নারী ও পুরুষ স্বাধীনতা সৈনিকদের ছবির পাশে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবিও, যাঁদের নিঃস্বার্থ আত্মবলিদানের কথা কখনোই ভুলবার নয়। এই পাতার গান কবিতা ও তথ্য, কবি- গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর গবেষণালব্ধ সংগ্রহ।
|
|
|
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
তোমার আমার ঠিকানা।
এক বাংলার কোটি প্রাণে আজ
একই পথের নিশানা।
একই ভাষার বন্ধনে মোরা
বাঁধা আছি চিরকাল।
কেউ তাঁত বুনি, লাঙল চালাই
কেউ হাতে ধরি হাল।
(তোই) ওপারে লাগলে শত্রু আঘাত
এপারের বুকে বেদনা।
একটি লক্ষ্যে জাগ্রত আজ
মোরা সাত কোটি প্রাণ।
মুক্ত স্বদেশে আমরা গাহি যে
নবজীবনের গান।
সোনার বাংলা আবার গড়ব
এই আমাদের ঘোষণা॥
পদ্মা-মেঘনা-যমুনা কথা - কবি গোবিন্দ হালদার, সুরকার - অজ্ঞাত।
ফেব্রুয়ারী ২০১৭ সালে প্রকাশিত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র পরিষদের সভাপতি
ডঃ জাহিদ হোসেন প্রধান দ্বারা সম্পাদিত, “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান”
সংকলনের অন্তর্ভুক্ত।
এপার বাংলার কলকাতায়, ভারতমাতার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির সামনে, ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।
দিল্লীর গেটওয়ে অফ ইণ্ডিয়াতে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ভারতীয় সেনার স্মৃতিতে বিগত ৫০ বছর যাবৎ প্রজ্বলিত "অমর জওয়ান জ্যোতি" নামক অনির্বাণ অগ্নিশিখাকে নিভিয়ে দিয়ে, আমাদের ইতিহাস থেকে, মুক্তিযূদ্ধের কালে, ভারত ও বাংলাদেশের মৈত্রী, সহযোগিতা ও ভারতীয় সেনার আত্মবলিদান এবং ইন্দিরা গান্ধীর অবিস্মরণীয় অবদান মুছে ফেলার বর্তমান ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আপ্রাণ চেষ্টার প্রতিবাদে আমরা এই ছবিটি এখানে তুলে দিলাম।
মোদী সরকার বলছেন যে তাঁরা নাকি ওই অনির্বাণ অগ্নিশিখাটিকে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে অন্যান্য সেনাদের সৌধের অগ্নিশিখার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন। যা আমরা হাস্যকর মনে করি।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সারা ভারত তথা এপার বাংলায়, দেশের শাসকদলের ছড়ানো বিদ্বেষ-বিষে বুঁদ হয়ে থাকা বাংলার নাগরিক সমাজ ও বিরোধী দলগুলি থেকে এই সিদ্ধান্তের কোনো জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়ে নি।
|
আবিষ্কার করো সেই জগৎ, যার কোথাও কোনো সীমান্ত নেই,
যার উপর দিয়ে বাতাস ব’য়ে যায় চিরকালের সমুদ্র থেকে,
যার আকাশে এক অনির্বাণ পুঁথি বিস্তীর্ণ---
নক্ষত্রময়, বিস্মৃতিহীন।
আলিঙ্গন করো সেই জগৎকে, পরষ্পরের চেতনার মধ্যে নিবিড়।
দেখবে কেমন ছোটো হ'তেও জানে সে, যেন মুঠোর মধ্যে ধ'রে যায়,
যেন বাহুর ভাঁজে গহ্বর, যেখানে তোমরা মুখ গুঁজে আছো
অন্ধকারে গোপনতায় নিস্পন্দ---
সেই একবিন্দু স্থান, যা পবিত্র, আক্রমণের অতীত,
যোদ্ধার পক্ষে অদৃশ্য, মানচিত্রে চিহ্নিত নয়,
রেডিও আর হেডলাইনের বাইরে সংঘর্ষ থেকে উত্তীর্ণ---
যেখানে কিছুই ঘটে না শুধু আছে সব
সব আছে --- কেননা তোমাদেরই হৃদয় আজ ছড়িয়ে পড়লো
ঝাউবনে মর্মর তুলে, সমুদ্রের নিয়তিহীন নিস্বনে,
নক্ষত্র থেকে নক্ষত্রে, দিগন্তের সংকেতরেখায়---
সব অতীত, সব ভবিষ্যৎ আজ তোমাদের।
আমাকে ভুল বুঝোনা। আমি জানি, বারুদ কত নিরপেক্ষ,
প্রাণ কত বিপন্ন।
কাল হয়তো আগুন জ্বলবে দারুণ, হত্যা হবে লেলিহান,
যেমন আগে, অনেকবার, আমাদের মাতৃভুমি এই পৃথিবীর
মৃত্তিকায়---
চাকার ঘূর্ণনের মতো পুনরাবৃত্ত।
তবু এও জানি ইতিহাস এক শৃঙ্খল, আর আমরা চাই মুক্তি,
আর মুক্তি আছে কোন পথে, বলো, চেষ্টাহীন মিলনে ছাড়া?
মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, মানুষের সঙ্গে বিশ্বের---
যার প্রমাণ, যার প্রতীক আজ তোমরা।
নাজমা, সামসুদ্দিন, আর রাত্রির বুকে লুকিয়ে-থাকা যত প্রেমিক,
যারা ভোলেনি আমাদের সনাতন চুক্তি, সমুদ্র আর নক্ষত্রের সঙ্গে,
রচনা করেছো পরস্পরের বাহুর ভাঁজে আমাদেক জন্য
এক স্বর্গের আভাস, অমরতায় কল্পনা :
আমি ভাবছি তোমাদের কথা আজকের দিনে, সারাক্ষণ-
সেই একটি মাত্র শিখা আমার অন্ধকারে, আমার চোখের সামনে
নিশান।
মনে হয় এই জগৎ-জোড়া দুর্গন্ধ আর অফুরান বিবমিষার বিরুদ্ধে
শুধু তোমরা আছো উত্তর, আর উদ্ধার।
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংকলক, কবি গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর কী সম্পর্ক?
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলনসাগর.কম এর পরিচালক মিলন সেনগুপ্তর কী সম্পর্ক?
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংকলক, কবি গণসঙ্গীতকার রাজেশ দত্তর কী সম্পর্ক?
|
মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলনসাগর.কম এর পরিচালক মিলন সেনগুপ্তর কী সম্পর্ক?
|
কবি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের সুরে কণ্ঠে
|